শসা খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জানেন কি!

শসা খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্পর্কে জানুন!

শসার স্বাস্থ্য উপকারিতা

 

শসা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, বরং শরীরের জন্য অনেক উপকারও নিয়ে আসে। শসা মূলত গ্রীষ্মকালীন একটি সবজি হলেও এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও শসায় রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।

১. শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে

শসায় প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি থাকে। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পানি, তাই শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে শসা অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন প্রচণ্ড গরমের কারণে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়, তখন শসা শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে। পানি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি কোষের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে এবং শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে

যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য শসা একটি আদর্শ খাবার। শসায় ক্যালোরি খুব কম, প্রায় ১০০ গ্রামে মাত্র ১৬ ক্যালোরি থাকে। এর ফলে আপনি বেশি শসা খেয়েও ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করবেন না। শসা খেলে পেট ভরা থাকে, কিন্তু ক্যালোরি কম গ্রহণ হয়। এই কারণে এটি ওজন কমানোর জন্য উপকারী।

৩. হজমশক্তি উন্নত করে

শসায় প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। ফাইবার আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যাদের হজম সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত শসা খেলে উপকার পেতে পারেন। এছাড়াও শসা অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।

৪. ত্বক ও চুলের যত্নে সহায়ক

শসা ত্বক ও চুলের জন্যও খুব উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন সি ও বায়োটিন, যা ত্বককে উজ্জ্বল এবং চুলকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে। শসার রস ত্বকে প্রয়োগ করলে তা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও শসার রস চুলে ব্যবহার করলে চুলের শুষ্কতা দূর হয় এবং চুল মসৃণ ও নরম হয়।

৫. বিষাক্ত পদার্থ দূর করে

শসা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকর। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়া শসায় রয়েছে পটাশিয়াম যা কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। কিডনি শরীরের টক্সিনগুলো ফিল্টার করে, ফলে নিয়মিত শসা খেলে শরীর থেকে দ্রুত টক্সিন বের হয়।

৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

শসায় পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তের শিরাগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে। যারা উচ্চ রক্তচাপজনিত

সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য শসা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।

৭. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

শসায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এতে উপস্থিত পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে যা হৃদরোগের অন্যতম কারণ। শসার ফাইবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

৮. হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে

শসায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। ভিটামিন কে হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। বয়স্কদের জন্য হাড়ের ক্ষয় একটি বড় সমস্যা, তাই শসা খাওয়া হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে।

৯. চোখের জন্য উপকারী

শসা চোখের যত্নে অত্যন্ত উপকারী। চোখের ক্লান্তি দূর করতে শসা ব্যবহার করা যায়। শসার ঠান্ডা ভাব চোখের ফোলা এবং ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে। রাতে ঘুম না হলে অনেক সময় চোখ ফুলে যায় এবং ডার্ক সার্কেল দেখা দেয়। এই অবস্থায় শসার পাতলা স্লাইস চোখের ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ রাখলে উপকার পাওয়া যায়।

১০. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

শসায় কম ক্যালোরি এবং কম শর্করা থাকার কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। শসায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। নিয়মিত শসা খেলে রক্তে শর্করার। 

মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারা নিয়মিত শসা খেলে উপকার পেতে পারেন।

১১. ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে

শসায় কিছু ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে শসায় কিউকারবিটাসিন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। নিয়মিত শসা খেলে শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে শসা কোলন, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

১২. মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে

শসায় ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স মস্তিষ্কের স্নায়ুকে শক্তিশালী করে এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সহায়ক। মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে নিয়মিত শসা খাওয়া যেতে পারে।

১৩. শরীরের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে

শসা শরীরের অম্লতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। শসা খেলে শরীরের পিএইচ স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের অম্লত্ব কমে। অম্লতা নিয়ন্ত্রণ না করলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়, তাই শরীরের পিএইচ ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বশেষে বলা যায়, শসা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। এটি হাইড্রেশন বজায় রাখা থেকে শুরু করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো পর্যন্ত নানাভাবে শরীরের উপকার করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শসা রাখা উচিত।

এরকম বিষয়ে আরো জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে বিশ্বের জানা অজানা তথ্য বা বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কারের ইতিহাস, রূপকথার মজাদার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি, বিশ্ব বিখ্যাত মনীষীদের জীবন কাহিনী, শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ টিপস ,ইসলামিক হাদিস এবং ইসলামের খুঁটিনাটি বিষয়, সাফল্য নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক গল্প বা স্ট্যাটাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক https://www.mahadistoryworld.com/

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url