Success story

 ধাপ ১: শিকড় – নিভৃত গ্রামের এক দীপ্ত আলো

Success story


দিনাজপুর জেলার উত্তরের এক ছোট্ট গ্রাম—মাটির ঘর, কুয়োর পানি আর কাঁচা রাস্তার মাঝখানে জড়িয়ে থাকা জীবন। ঠিক সেখানেই জন্ম নেয় এক মেয়ে—দীপ্তি। জন্মের পরপরই তার বাবা মারা যান ক্যান্সারে। মা জহুরা বেগম নিজের অল্প বয়সে বিধবা হয়ে ওঠেন। নিজে না খেয়ে মেয়েকে খাওয়ানো ছিল তার জীবনের একমাত্র ব্রত।

দীপ্তির শৈশব কেটেছে ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে, মাটির উঠানে খেলা করে আর পুরনো বইয়ের পাতা উল্টে। যেহেতু বই কেনার টাকা ছিল না, সে হাট থেকে ফেলে দেওয়া পুরনো কাগজ কুড়িয়ে আনত। তাতেই অক্ষরের সাথে পরিচয়। একদিন গ্রামের স্কুলের শিক্ষক সাহেব এসে দেখলেন, একটা ছোট মেয়ে গাছতলায় বসে পুরনো একটা ইংরেজি বইয়ে অক্ষর ধরে ধরে পড়ার চেষ্টা করছে।

— তুমি স্কুলে যাও?
— না স্যার, মা বলেন টাকা নেই।
— তুমি ভর্তি হবে, আমি ব্যবস্থা করব।

এই ছোট্ট কথাতেই দীপ্তির জীবনের প্রথম বাঁক ঘুরে যায়।

ধাপ ২: সূচনা – প্রথম পাঠ, প্রথম বাধা

গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পরই দেখা যায় দীপ্তির প্রতিভা। সে সবার চেয়ে দ্রুত শেখে, প্রশ্ন করে, খাতায় বড় বড় অক্ষরে লিখে। কিন্তু দারিদ্র্য তাকে পিছু ছাড়ে না। মা দিনের পর দিন মাঠে কাজ করেন, ঝড়বৃষ্টিতে ভেজেন, তবু মেয়ের খাতা-কলম জোগাড় করে দেন। দীপ্তি জানে—তাদের দুজনের জীবনটাই এখন এই বইয়ের পাতায়।

তবু সমস্যা কমে না। একদিন বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেখেন, দীপ্তির চোখে পানি। কারণ সে ওইদিন দুপুরে কিছু খায়নি। অনেকটা সময় না খেয়ে স্কুলে এসেছে। শিক্ষক তাকে ডেকে নিয়ে গেলেন হেডমাস্টারের ঘরে। সেদিন থেকে স্কুলে তাকে দুপুরে খাবার দেওয়া শুরু হয়।

পঞ্চম শ্রেণি পাস করল দীপ্তি প্রথম হয়ে। তখন পুরো গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়ে, জহুরার মাইয়া ক্লাসে সবার আগায়া গেছে। কিছু মানুষ হিংসা করল, কেউ বা উৎসাহ দিল। কিন্তু দীপ্তি জানত, তার যাত্রা এখনো অনেক দূর।

ধাপ ৩: সংগ্রাম – শহরের কঠিন দিনগুলো

মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হতে হলে পাশের উপজেলা শহরে যেতে হয়। মা অনেক ভেবে ভেবে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করলেন। দীপ্তি জানে, শহরের স্কুলে পড়া মানেই নতুন চ্যালেঞ্জ। বই, ইউনিফর্ম, ভর্তি ফি—কোনোটারই টাকা নেই। শিক্ষক ও গ্রামের কিছু সহানুভূতিশীল মানুষ মিলে সামান্য তহবিল গঠন করেন, তাতে ভর্তি হয় দীপ্তি।

নতুন স্কুলে গিয়ে সে প্রথমে একটু কেঁপে যায়। শহরের ছেলেমেয়েরা আধুনিক, ইংরেজিতে কথা বলে, দামি মোবাইল ব্যবহার করে। কেউ কেউ তাকে গ্রাম্য বলে খ্যাপায়। কিন্তু দীপ্তি হার মানে না। ক্লাসে প্রথম হওয়ার লড়াই সে চালিয়ে যায়।

শিক্ষক সাহেব এসে দেখলেন, একটা ছোট মেয়ে গাছতলায় বসে পুরনো একটা ইংরেজি বইয়ে অক্ষর ধরে ধরে পড়ার চেষ্টা করছে।

 তুমি স্কুলে যাও?
না স্যার, মা বলেন টাকা নেই।
 তুমি ভর্তি হবে, আমি ব্যবস্থা করব।

এই ছোট্ট কথাতেই দীপ্তির জীবনের প্রথম বাঁক ঘুরে যায়।

একসময় নিজের খরচ চালাতে সে টিউশনি শুরু করে—দিনে দুইটা ক্লাস আর রাতে পড়াশোনা। ঘুম কমে যায়, চোখে ক্লান্তি জমে, কিন্তু লক্ষ্য থেকে একচুলও সরে না।

এসএসসি পরীক্ষা আসে। দীপ্তি পড়ে অন্ধের মতো। পরীক্ষার দিন মা গ্রাম থেকে এসে পাশে বসে বলেন, তুই পারবি মা, তোর মুখে একদিন সবাই আলো খুঁজবে।

ফল প্রকাশে আসে—দীপ্তি জিপিএ-৫ পেয়েছে।

ধাপ ৪: সাফল্য – মেডিকেলের সিঁড়িতে পা

এই ফলাফলের পরে অনেকেই তাকে বাহবা দিল, কিন্তু কলেজে ভর্তি ও মেডিকেল অ্যাডমিশন যুদ্ধ ছিল আরও কঠিন। সে দিনরাত পরিশ্রম করে কলেজে ভর্তি হয়। তারপর শুরু হয় মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি।

রোজকার রুটিন—সকাল ৫টায় ঘুম থেকে ওঠা, বই হাতে নেওয়া, ৬ ঘণ্টা কোচিং, টিউশনির ফাঁকে ফাঁকে প্রস্তুতি। ফ্রেন্ডরা ঘুরতে যায়, ছবি তোলে, আড্ডা দেয়—দীপ্তির জীবন শুধু প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে।

শেষ পর্যন্ত আসে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন—মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল। সে উত্তীর্ণ হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে!

মা সেই খবর শুনে চুপ করে বসে পড়েন, চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। তারপর বলেন, আমার মেয়ে  অনেক বড় সফলতা পেয়েছে।

এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url