জঙ্গলের বন্ধুদের মহা অভিযান
গল্পের নাম: জঙ্গলের বন্ধুদের মহা অভিযান
ধাপ ১: রহস্যময় জঙ্গলের সকাল
গভীর সবুজে মোড়া এক বিশাল জঙ্গল, যেখানে ভোরের প্রথম সূর্যের আলো গাছের পাতায় মৃদু কাঁপতে কাঁপতে পড়ে। পাখিরা তখন গান গাইতে শুরু করেছে—শালিক, দোয়েল, কোকিল আর টিয়া মিলেমিশে তৈরি করেছে সুরের মেলা।
এই জঙ্গলে বাস করত এক নানারকম পশু-পাখি। এর মধ্যে সবচেয়ে কৌতূহলী ছিল খরগোশ শুভ্রা, যে সারাদিন নতুন কিছু আবিষ্কার করতে ভালোবাসত। তার বন্ধুদের মধ্যে ছিল রাজা নামের বুদ্ধিমান টিয়া, ধ্রুব নামের সদয় হাতি আর রূপা নামের সাহসী কাঠবিড়ালি।
সেদিন ভোরে শুভ্রা দৌড়ে গেল রাজা টিয়ার বাসার কাছে। শুনেছ, জঙ্গলের পশ্চিম প্রান্তে অদ্ভুত এক আলো দেখা যাচ্ছে?—বলল শুভ্রা।
রাজা চোখ কুঁচকে বলল, আলো? সেটা কি মানুষের ক্যাম্প হতে পারে?
না, শুভ্রা মাথা নাড়ল, ওটা যেন সোনালী রঙের, রাতে জ্বলে ওঠে। আমি মনে করি আমাদের সেখানে যাওয়া উচিত।
ধ্রুব হাতি আস্তে হেসে বলল, যাওয়া যেতে পারে, কিন্তু সাবধান থাকতে হবে। পশ্চিম প্রান্তে অনেক দিন কেউ যায়নি।
এভাবেই শুরু হল তাদের রহস্যময় আলোর খোঁজে যাত্রার পরিকল্পনা।
ধাপ ২: যাত্রার শুরু ও বিপদসংকেত
পরের দিন সকালে চার বন্ধু রওনা হল। প্রথমেই তারা পৌঁছাল বাঁশের ঝোপের কাছে, যেখানে বুবু নামের এক দুষ্টু বানর থাকত।
বুবু লাফিয়ে সামনে এসে বলল, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?”
শুভ্রা গোপন রাখতে চাইল, কিন্তু রাজা বলেই ফেলল, আমরা পশ্চিম প্রান্তে যাচ্ছি।
বুবু ভুরু কুঁচকে বলল, পশ্চিম প্রান্ত? ওখানে নাকি পুরনো বাঘ গজেন্দ্র থাকে। সবাই বলে, সে কারো কাছাকাছি যেতে দেয় না।
ধ্রুব একটু চিন্তিত হলো, কিন্তু রূপা বলল, ভয় নেই, আমরা একসাথে আছি।
তারা হাঁটতে হাঁটতে দেখল পথে কিছু গাছ কাটা পড়ে আছে। মানুষ এসেছে নাকি?—রাজা ফিসফিস করে বলল।
শুভ্রা বলল, হয়তো… কিন্তু এই গাছ কাটার শব্দ আমি শুনিনি।
তারা জানত না, ঝোপের আড়াল থেকে গজেন্দ্র বাঘ চুপচাপ তাদের পথ নজরে রাখছে।
ধাপ ৩: গজেন্দ্রর মুখোমুখি
পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই হঠাৎ গর্জন শোনা গেল—
কে এসেছে আমার এলাকায়?
চার বন্ধু একসাথে থমকে দাঁড়াল। গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল বিশাল, কালচে-হলুদ রঙের বাঘ, তার চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
শুভ্রা কাঁপা গলায় বলল, আমরা… শুধু দেখতে এসেছি… ওই আলোটা…
গজেন্দ্র ভ্রু তুলে বলল, আলো? ওটা তোমাদের দেখার জিনিস নয়। ফিরে যাও।
রাজা সাহস করে বলল, আমরা কাউকে ক্ষতি করব না। আমরা শুধু জানতে চাই ওটা কী।
গজেন্দ্র কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল, যদি যেতে চাও, আগে আমার এক শর্ত মানতে হবে। জঙ্গলের গভীরে এক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। তোমরা যদি তার কারণ খুঁজে বের করো, আমি তোমাদের আলো দেখতে দেব।
এভাবেই তাদের মিশন বদলে গেল—এখন তারা নদী বাঁচানোর জন্য রওনা হল।
ধাপ ৪: নদীর রহস্য
ধাপ ৫: রাতের অপারেশন
রাত নেমেছে, জঙ্গলে চাঁদের আলো পড়েছে। চার বন্ধু চুপচাপ নদীর ধারে পৌঁছাল।
ধ্রুব তার বিশাল শুঁড় দিয়ে কাঠ সরাতে লাগল, রূপা ছোট গর্ত বানিয়ে পানি বের হতে দিল। শুভ্রা আর রাজা পাহারা দিচ্ছিল।
কিছুক্ষণ পরেই পানি টুপটাপ করে বয়ে যেতে শুরু করল। তারপর ধীরে ধীরে নদীর পুরনো স্রোত ফিরে এল।
পানি ছুটে চলল জঙ্গলের ভেতর, আর চার বন্ধু খুশিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরল।
পরের দিন সকালেই গজেন্দ্র এসে বলল, তোমরা প্রতিশ্রুতি রেখেছ। এখন আমার সাথে এসো, তোমাদের সেই আলো দেখাব।
ধাপ ৬: সোনালী আলোর রহস্য
গজেন্দ্র তাদের নিয়ে গেল এক খোলা জায়গায়। গাছপালা ঘিরে রয়েছে, মাঝখানে এক বিশাল প্রাচীন গাছ। গাছের গায়ে লেগে আছে অসংখ্য জোনাকি পোকা, যা রাতে সোনালী আলো ছড়ায়।
শুভ্রা বিস্ময়ে বলল, এতো সুন্দর! আমি ভাবিনি আলো এত প্রাকৃতিক হতে পারে।
গজেন্দ্র হাসল, হ্যাঁ, মানুষ ভাবে এগুলো জাদু, কিন্তু এগুলো আমাদের জঙ্গলের সম্পদ। তুমি যদি বন্ধুদের সাথে এগুলো রক্ষা করো, তাহলে জঙ্গলও তোমাদের রক্ষা করবে।
সেদিন থেকে শুভ্রা, রাজা, ধ্রুব আর রূপা ঠিক করল—তারা জঙ্গলের প্রতিটি প্রাণী, গাছ আর নদীকে রক্ষা করবে। আর তাদের এই প্রতিজ্ঞার কথা ছড়িয়ে পড়ল সারা জঙ্গলে।
এভাবেই চার বন্ধু শুধু রহস্য খুঁজে পায়নি, তারা শিখেছিল—প্রকৃতি আমাদের বন্ধু, আর তাকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
জঙ্গলের বন্ধুদের মহা অভিযান – দ্বিতীয় পর্ব
ধাপ ১: অস্বস্তিকর সকাল
সোনালী আলোর রহস্য উন্মোচনের পর কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে। শুভ্রা, রাজা, ধ্রুব, রূপা আর গজেন্দ্র এখন জঙ্গলের রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিত। তারা একসাথে টহল দেয়, কোথাও সমস্যা হলে সাথে সাথে সমাধানের চেষ্টা করে।
এক সকালে শুভ্রা যখন গাজর খাচ্ছিল, তখন রাজা টিয়া দ্রুত উড়ে এসে ডাকল—
শুভ্রা! উত্তর প্রান্তে ধোঁয়া উঠছে! মনে হচ্ছে আগুন লেগেছে!
শুভ্রা বিস্মিত হয়ে বলল, আগুন? এ সময় তো বৃষ্টি হওয়ার কথা!
কিছুক্ষণ পর ধ্রুব হাতি আর রূপা কাঠবিড়ালিও এসে খবর নিশ্চিত করল। ধ্রুব বলল, গজেন্দ্রও খবর পেয়েছে, ও আমাদের ডেকেছে।
তারা গজেন্দ্রের কাছে গেলে বাঘ বলল, উত্তর প্রান্তে মানুষ ঢুকেছে। তারা গাছ কাটছে আর আগুন দিচ্ছে। যদি এটা ছড়িয়ে পড়ে, জঙ্গলের অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে।
শুভ্রা দৃঢ় কণ্ঠে বলল, আমরা বসে থাকব না। চল, ওদের থামাই!
ধাপ ২: বিপদের দিকে যাত্রা
পাঁচ বন্ধু একসাথে উত্তর প্রান্তের দিকে রওনা দিল। পথে তারা আতঙ্কিত প্রাণীদের দেখতে পেল—হরিণ ছুটছে, পাখিরা উড়ে যাচ্ছে, সাপ পর্যন্ত গর্ত ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
রাজা এক হরিণকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?"
হরিণ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, মানুষ বলছে এখানে রাস্তা বানাবে, তাই গাছ কেটে ফেলছে আর শুকনো ডালপালা পুড়িয়ে দিচ্ছে।
রূপা বলল, রাস্তা মানে গাছ কাটা, নদী নষ্ট, প্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস!
গজেন্দ্র গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল, আমরা শুধু জঙ্গল রক্ষা করব না, তাদের বুঝিয়ে দেব এটা আমাদের ঘর।
ধাপ ৩: মানুষের শিবিরে গুপ্ত নজরদারি
তারা পাহাড়ের কাছে পৌঁছেই থেমে গেল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন মানুষ আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে কেটে ফেলা গাছের গুঁড়ি, হাতুড়ি, করাত আর বড় বড় পাথর সাজানো।
শুভ্রা ফিসফিস করে বলল, আমরা যদি হঠাৎ গিয়ে কিছু বলি, তারা শুনবে না। উল্টে হয়তো আমাদের ধরার চেষ্টা করবে।
রাজা বলল, আমাদের চমকে দেওয়ার মতো পরিকল্পনা দরকার।
তখন গজেন্দ্র বলল, আমরা ভয় দেখাব। আগুনের ধোঁয়ার সাথে ভুতুড়ে শব্দ, আর কিছু রহস্যময় ঘটনা ঘটালে তারা হয়তো পালিয়ে যাবে।