Fairy Tale for Children: The Kingdom of the Magic Stone

 জাদুর পাথরের রাজ্য

Fairy Tale for Children


ধাপ ১: রহস্যময় বন এবং কিশোর রাজকুমার

অনেক দূরের এক রাজ্যে, পাহাড়ের কোলে ছিল এক ছোট রাজ্য – নাম অরনুয়া। এই রাজ্যে বাস করত এক কিশোর রাজকুমার, নাম তার আরিয়ান। বয়সে মাত্র পনেরো, কিন্তু সাহস ও মমত্ববোধে সে ছিল অনন্য। তার বাবা রাজার মৃত্যুর পর মা রানি এলিয়ানা তাকে ভালোবাসায় আগলে রেখেছিলেন। রাজ্যের মানুষ রাজকুমারকে ভালোবাসত কারণ সে প্রজাদের কষ্ট বুঝতে পারত।

একদিন রাজ্যের এক বৃদ্ধ দার্শনিক রাজপ্রাসাদে এসে বলল, রাজকুমার, অরনুয়া রাজ্যে এক অভিশাপ এসেছে। শীঘ্রই এই ভূমি পানিতে ডুবে যাবে যদি তুমি না খুঁজে পাও জাদুর পাথর

আরিয়ান বিস্মিত হলো। জাদুর পাথর কী? প্রশ্ন করল সে। দার্শনিক বলল, সেই পাথর আছে কালো অরণ্য-এর গভীরে, যেখানে আলো ঢোকে না, আর যেখানে ভয়ংকর ছায়া জানে মানুষ কীভাবে ভয় পায়।


রানির নিষেধ সত্ত্বেও আরিয়ান সিদ্ধান্ত নিল, সে রাজ্য রক্ষায় যেকোনো মূল্যে জাদুর পাথর খুঁজবে। পরদিন ভোরেই সে রওনা হলো, সঙ্গে নিল তার প্রিয় তরবারি, কিছু শুকনো খাবার, আর এক বিশ্বস্ত সঙ্গী—ঘোড়া তুন্দ্রা।

ধাপ ২: অরণ্যের অভিশপ্ত ধোঁয়া

আরিয়ান রওনা দিল কালো অরণ্যর পথে। অরণ্য যত গভীরে গেল, ততই চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢেকে যেতে লাগল। পাখির ডাক থেমে গেল, গাছগুলো এমনভাবে দাঁড়িয়ে যেন তারা পথ আটকে দিতে চায়। আচমকা তুন্দ্রা থেমে গেল। সামনে ছায়ার মতো কেউ দাঁড়িয়ে।

তুমি কি জাদুর পাথর খুঁজছ?—একটি মেয়েলি কণ্ঠ শোনা গেল। সামনে এসে দেখা দিল এক কিশোরী—তার নাম লুনা। তার চোখে ছিল রহস্য ছাপ।

“আমি জানি তুমি কার জন্য খুঁজছ পাথর। কিন্তু অরণ্যে প্রবেশ করলে তুমি হারাতে পারো নিজের স্মৃতি, নিজেকে। তোমাকে সাহায্য করতে চাই।

আরিয়ান দ্বিধায় পড়ল, কিন্তু বুঝল লুনার সাহায্য ছাড়া সে টিকতে পারবে না ।

দুজন মিলে পা রাখল অরণ্যের গহীনে। পথের পাশে দেখা মিলল ঝর্ণা, যার পানি উল্টো দিকে বয়ে যাচ্ছে। একটি গাছে স্বর্ণের পাতা। হঠাৎ এক জায়গা থেকে বেরিয়ে এলো এক দানবাকৃতি বাদুড়, যার ডানায় আগুন। লুনা বলল, এটা আগ্নি ছায়া, প্রথম রক্ষক। তাকে হারাতে হবে।

আরিয়ান তরবারি হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল দানবের ওপর। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সে আগ্নি ছায়াকে পরাস্ত করল। দানব মাটিতে পড়ে বলল, তুমি যদি সত্যিই জাদুর পাথরের যোগ্য হও, তবে দ্বিতীয় রক্ষক তোমার হৃদয়ের পরীক্ষা নেবে।

ধাপ ৩: হৃদয়ের মরুভূমি

অরণ্য শেষ হতে না হতেই তারা প্রবেশ করল এক উষর মরুভূমিতে—হৃদয়ের মরুভূমি। এই জায়গায় কোনো শব্দ নেই, নেই কোনো প্রাণী, শুধু বালু আর বিস্ময়। হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে এল। লুনা বলল, এখানে কেউ তোমার স্মৃতি নিয়ে খেলে, ভুলে গেলে তুমি নিজেকেও চিনবে না।

বালুর মধ্যে আরিয়ান দেখতে পেল তার শৈশব—সে বাবার কোলে হাসছে, প্রজাদের সঙ্গে খেলা করছে। কিন্তু তারপর দেখতে পেল এক বিভ্রান্তিময় দৃশ্য—রাজ্য জ্বলছে, মা কাঁদছেন, আর সে দূরে দাঁড়িয়ে।

তুমি ব্যর্থ হবে, কণ্ঠস্বর এলো বাতাসে।

আরিয়ান চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে চিন্তা করল। সে জানে, রাজ্য তার কাছে শুধু দায় নয়, ভালোবাসা। সে ভয়কে জয় করল নিজের আত্মবিশ্বাস দিয়ে। সাথে সাথে সব দৃশ্য মিলিয়ে গেল, এবং সামনে দেখা গেল দ্বিতীয় রক্ষক—এক স্বচ্ছ দেহের দৈত্য যার নাম সত্যের প্রহরী

সে আরিয়ানকে বলল, তুমি নিজের হৃদয়কে জয় করেছ। এখন তৃতীয় পরীক্ষায় তোমাকে মুক্ত করতে হবে এমন কিছু যা তোমার খুব প্রিয়।

আরিয়ান নিরব হলো। লুনা পাশে দাঁড়িয়ে রইল। তৃতীয় ধাপে কী অপেক্ষা করছে, তা কেউ জানত না।

ধাপ ৪: আত্মত্যাগের পাহাড়

তারা পৌঁছাল আত্মত্যাগের পাহাড়ে। চারদিকে মেঘ, বাতাসে বিষাদ। লুনা থেমে বলল, এই পাহাড়ে যা চাই তা দিতে হয়। নিলে শুধু হাহাকার।

আরিয়ান সামনে এগিয়ে দেখল একটা পুরনো মন্দির, যার দরজায় লেখা জাদুর পাথর পেতে হলে দিতে হবে হৃদয়ের একাংশ।

হঠাৎ লুনা বলে উঠল, আমার কথা মনে আছে? আমি সেই শিশু, যাকে তুমি ছোটবেলায় নদীর স্রোত থেকে বাঁচিয়েছিলে। কিন্তু আমি সেই দিনেই এই রাজ্যের অভিশাপ হয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে মুক্ত করতে হলে তোমাকে পাথর না নিয়ে ফিরে যেতে হবে।

আরিয়ান দ্বিধায় পড়ে গেল। রাজ্য বাঁচাতে হলে পাথর দরকার, কিন্তু লুনাকে মুক্ত করতে হলে পাথর না নিয়ে ফিরে যেতে হবে!

আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি বাঁচাতে চাই শুধু রাজ্য নয়, তোমাকেও। আমি পাথর ছাড়ব, যদি তুমি ফিরে আসো।

লুনার চোখে জল এল। তখন মন্দির থেকে বেরিয়ে এলো শেষ রক্ষক—এক বৃদ্ধ যাদুকর। সে বলল, তুমি সত্যিকারের রাজা। তুমি আত্মত্যাগ শিখেছ, ভালোবাসা বুঝেছ।

সে আরিয়ানকে দিল আসল জাদুর পাথর

ধাপ ৫: রাজ্যে ফিরে আসা

আরিয়ান ও লুনা ফিরে এল অরনুয়া রাজ্যে। তখন রাজ্যে চারদিকে কালো মেঘ, নদী উপচে পড়ছে, মানুষ আতঙ্কিত। রানিও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এমন সময় রাজপথে রাজকুমার আরিয়ানকে দেখা গেল, তার হাতে উজ্জ্বল আলোয় ভরা পাথর।

সে রাজ্যচত্বরে দাঁড়িয়ে বলল, এই পাথর কেবল আলো নয়, এটি ভালোবাসা, আত্মত্যাগ আর সাহসেরও প্রতীক।

সে পাথরটি রাজমন্দিরে রেখে দিল। মুহূর্তেই অন্ধকার মেঘ মিলিয়ে গেল, নদীর পানি ফিরে গেল উৎসে। প্রজারা আনন্দে চিৎকার করে উঠল।

রানির চোখে জল, লুনা আবার স্বাভাবিক মানবরূপে ফিরে এল। রাজ্যে এক উৎসবের দিন ঘোষণা হলো।

ধাপ ৬: নতুন রাজা, নতুন স্বপ্ন

সময় গড়িয়ে গেল। আরিয়ান এখন প্রাপ্তবয়স্ক রাজা। সে ন্যায়, দয়া ও সাহসে রাজ্য চালায়। লুনা তার পাশে থেকে রাজ্য পরিচালনায় সাহায্য করে।

জাদুর পাথর এখন রাজমন্দিরে থাকে, কিন্তু মানুষ জানে আসল পাথর নয়, মানুষের ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ-ই সবচেয়ে বড় জাদু।

আরিয়ান প্রজাদের নিয়ে গড়ে তোলে একটি নতুন স্বপ্নের রাজ্য, যেখানে ভয় নেই, বিভেদ নেই। শুধু আছে ভালোবাসা, সহানুভূতি আর এক হয়ে বাঁচার অঙ্গীকার।

আর সেই দিন থেকে, অরনুয়া রাজ্যকে সবাই বলে—জাদুর পাথরের রাজ্য, কিন্তু পাথরের চেয়েও বেশি মূল্যবান সেখানে রাজা আরিয়ানের মানবতা


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Mahadistoryworld Ads 2

whatsapp" viewbox="0 0 512 512" stroke="none" fill="currentColor">