Educational stories for kids: The story of Raju’s victory with truth and courage

 ধাপ ১: গ্রামের শান্ত ও সৎ ছেলে

গ্রামের একটি ছোট টিনের ঘরে থাকত আরিফ ও তার পরিবার। বাবা একজন কৃষক, মা গৃহিণী। দারিদ্র্য থাকলেও আরিফের পরিবার ছিল সৎ, সরল এবং পরিশ্রমী। আরিফ ছিল দশ বছরের এক বুদ্ধিমান ও ভদ্র ছেলে। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যেত, বিকেলে বাবার সঙ্গে ক্ষেত খুঁড়ত, আবার রাতে মায়ের সঙ্গে পড়াশোনা করত। সে ছিল গ্রামের স্কুলের একাধারে মেধাবী ও সকলের প্রিয়।

একদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে সে রাস্তার পাশে একটি ছোট লাল রঙের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে। কৌতূহল নিয়ে খুলে দেখে ভেতরে মোটা একটি টাকা বান্ডিল। আশেপাশে কেউ ছিল না। অন্য কেউ হলে হয়তো টাকাগুলো নিয়ে ফেলত, কিন্তু আরিফ দ্বিধা না করে ব্যাগটি নিয়ে স্কুলে গিয়ে শিক্ষকের হাতে তুলে দেয়।

শিক্ষক অবাক হয়ে ব্যাগটি নেন ও খুলে দেখে বলেন, তুমি জানো কত টাকা আছে এখানে? এক লাখ টাকা! আরিফ মাথা নিচু করে বলে, স্যার, এটা আমার না। কারও হারানো জিনিস আমি রাখতে পারি না।

পরদিন স্কুলে সেই টাকার মালিক এলেন—এক বৃদ্ধ ব্যবসায়ী। তিনি খুশি হয়ে আরিফকে এক হাজার টাকা পুরস্কার দিতে চাইলেন, কিন্তু আরিফ মাথা নাড়ে, না চাচা, আমি কোনও পুরস্কারের জন্য এটা করিনি। শিক্ষকেরা তখন বলেন, এই হলো প্রকৃত শিক্ষা—সততা।

ধাপ ২: সন্ধ্যার বীরত্ব

একদিন সন্ধ্যায় আরিফ বই পড়ে বসে ছিল। এমন সময় জানালার পাশে কুকুরের গলায় অদ্ভুত চিৎকার শুনতে পেয়ে সে বাইরে যায়। দেখে, পাশের বাড়ির দাদু চাচার ছাগলটি খাঁচা থেকে বেরিয়ে গেছে। দাদু হাঁপাতে হাঁপাতে চারপাশে ছুটে বেড়াচ্ছেন। গ্রামটা অন্ধকার, বাতি ঠিকমতো জ্বলছে না। সবাই তখন বাড়িতে ব্যস্ত। কেউ আর দাদুকে সাহায্য করছিল না।

আরিফ ছুটে গিয়ে বলে, চাচা, আমি খুঁজে আনি। দাদু বলেন, বাবা, ওদিকে যাস না, শিয়াল দেখা গেছে। বিপদ হবে। কিন্তু আরিফ ভয় না পেয়ে একটা লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সে গ্রামের খালপাড়, বাঁশঝাড়, ফসলের মাঠ—সবখানে খুঁজতে থাকে।

অবশেষে খালপাড়ে একটি ঝোপের ভেতর থেকে ছাগলটির আওয়াজ পায়। ছাগলটি কাঁপছিল, যেন ভয় পেয়েছে। আরিফ ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে তাকে আদর করে ধরে নিয়ে আসে। যখন সে ছাগলসহ ফিরল, তখন অনেকেই এসে ভিড় করল। দাদু আনন্দে চোখে জল এনে বললেন, তুই শুধু সৎ না, সাহসীও। তুই আমাদের গর্ব।

এ ঘটনার পর গ্রামের সবাই বুঝে গেল, আরিফের ভেতরে রয়েছে এক অসাধারণ মানসিক শক্তি। সে শুধু বইয়ে ভালো না, কাজে-কর্মেও বড়দের মতো সাহসী। শিক্ষকরা পরদিন ক্লাসে ঘটনাটি সবাইকে বলেন, যেন তারা আরিফ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

ধাপ ৩: হাটে এক শিক্ষণীয় ঘটনা

শনিবার আরিফ তার মায়ের সঙ্গে সাপ্তাহিক হাটে যায়। বাজারে অনেক ভিড়। মা চাল, ডাল, লবণ কিনছিলেন আর আরিফ হাঁটতে হাঁটতে একটা মাছের দোকানে চলে যায়। হঠাৎ, এক বৃদ্ধ ভিখারি এসে সাহায্য চায়। দোকানদার তাকে তাড়িয়ে দেয়, লোকজন পাশ কাটিয়ে যায়। ভিখারির চোখে জল দেখে আরিফের মন কেঁপে ওঠে।

সে দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বলে, মা, আমি মাছ না খেলে চলবে। আমার টাকাটা ঐ চাচাকে খাওয়াতে চাই। মা অবাক হয়ে বলে, তুই খুব মায়াবান। যা, নিজের ইচ্ছামতো কর।

আরিফ তার ৫০ টাকা দিয়ে ভিখারিকে এক প্লেট ভাত আর ডাল কিনে দেয়। ভিখারি খেতে খেতে কাঁদতে থাকেন। তিনি আরিফের মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন, বাবা, তোর জীবনে যেন দুঃখ না আসে, তুই যেন বড় মানুষ হোস।

এই ঘটনা দেখে এক পাশ থেকে এক লোক এগিয়ে আসে। তিনি ছিলেন শহর থেকে আসা এক কর্মকর্তা। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমি বহু শিশু দেখেছি, কিন্তু এত মায়াবান ছেলে কমই দেখা হয়। তিনি আরিফের নাম, স্কুল, বাড়ির ঠিকানা লিখে নেন।

কয়েকদিন পর জানা গেল, সেই ভদ্রলোক একটি সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা। তিনি আরিফকে ‘সহমর্মিতা ও মানবিকতা পুরস্কার’ দিতে চান। গ্রামে অনুষ্ঠান হয়, সবাই চমকে যায়।

ধাপ ৪: প্রতিযোগিতার বড় জয়

একদিন স্কুলে ঘোষণা এলো—সততা ও নৈতিকতা বিষয় নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা হবে। প্রথম পুরস্কার পাবে বই, সনদ ও একটি শিক্ষাবৃত্তি। আরিফ খুব খুশি হয়। সে মনে মনে ভাবে, এই বিষয় তো আমার জীবনের অংশ!

পরের কয়েকদিন সে গভীর মনোযোগ দিয়ে রচনা লেখে। সে তার অভিজ্ঞতা যোগ করে—টাকাভরা ব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়া, ছাগল উদ্ধারের কথা, ভিখারিকে সাহায্য করার ঘটনা। প্রতিটি অভিজ্ঞতার শেষে সে লেখে: মানুষের প্রকৃত গুণ মাপে যায় তার কাজে। সত্যবাদিতা, সাহস ও দয়া একজন মানুষকে বড় করে তোলে।

প্রতিযোগিতার দিন সে পুরো আত্মবিশ্বাসে রচনা পড়ে শোনায়। শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শোনে। শিক্ষকরা বলেন,

আরিফ কেবল লিখেনি, সে নিজের জীবনের বাস্তবতা থেকে আমাদের শেখাচ্ছে।

বিচারকেরা সর্বসম্মতভাবে তাকে প্রথম পুরস্কার দেন। পত্রিকায় তার ছবি ও লেখা ছাপা হয়। পুরো গ্রাম গর্বে ফেটে পড়ে। শিক্ষকেরা বলেন, এমন ছেলেরাই ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেবে।

আরিফ নম্রভাবে মাথা নিচু করে বলে, আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি।

ধাপ ৫: আলোকিত ভবিষ্যতের পথে

এত সাফল্য পাওয়ার পরও আরিফ বদলায়নি। সে আগের মতোই প্রতিদিন সকালবেলা উঠত, বাবার সাথে কাজ করত, মায়ের সঙ্গে পড়ত। স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের পড়াত। কেউ না পারলে সাহায্য করত। শিক্ষকরা বলতেন, আরিফ হলো আমাদের আদর্শ ছাত্র।

গ্রামে নতুন স্কুল প্রকল্প শুরু হলে সেই শহরের কর্মকর্তা আবার আসেন। তিনি এবার আরিফকে বলেন, তুমি চাইলে বড় শহরের একটি বিশেষ স্কুলে পড়ার সুযোগ পাবে। তোমার লেখাপড়ার খরচ আমি দেব।

প্রথমে আরিফ রাজি হচ্ছিল না। সে তার বন্ধু ও পরিবারকে ছেড়ে যেতে চাইছিল না। কিন্তু শিক্ষক বলেন, তোমার ভবিষ্যৎ দেশের জন্য প্রয়োজন। তুমিই আলোর পথ দেখাবে সবাইকে।

অবশেষে আরিফ রাজি হয়। নতুন শহরে গিয়ে সে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়, আর সেখানে নিজের সততা, সাহস আর মমত্ববোধ দিয়ে সকলের মন জয় করে নেয়।

দিনে দিনে সে বড় হয়, লেখাপড়ায় আরও ভালো করে। পরে সে একদিন হয় দেশের এক সৎ ও সাহসী প্রশাসক, যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ত, গরিবকে সাহায্য করত।

তাকে দেখে সবাই বলত, এটাই সেই ছোট্ট আরিফ—সত্য ও মানবতার বিজয়ী।

এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
whatsapp" viewbox="0 0 512 512" stroke="none" fill="currentColor">