Cartoon Stories for Kids: Rupoboti’s Demon Journey and the Triumph of Truth

 রূপবতীর রাক্ষসযাত্রা ও সত্যের বিজয়

Cartoon Stories for Kids


ধাপ ১: রাজকন্যা রূপবতী ও সোনার পাথরের দেশ

অনেক দিন আগের কথা। অরুণনগর নামের এক রাজ্যে রাজত্ব করতেন রাজা রূপেশ চন্দ্র। তিনি ছিলেন প্রজাপ্রিয়, ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু। তার একমাত্র কন্যা রূপবতী ছিল অসাধারণ রূপের অধিকারী। কেবল রূপ নয়, সে ছিল অগাধ সাহস ও বুদ্ধির প্রতীক। প্রাসাদের শিক্ষকরা বলতেন, রূপবতী যেন ভবিষ্যতের একজন শাসক হবার যোগ্যতা নিয়েই জন্মেছে।

রূপবতীর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল প্রাসাদের পেছনের বাগান। সেই বাগান পেরিয়ে ছিল এক গভীর অরণ্য, যেটাকে সবাই বলত অভিশপ্ত জঙ্গল। কেউ সেখানে যেত না, কারণ শোনা যেত ভয়ংকর রাক্ষসদের বাস সেই জঙ্গলে। আরও শোনা যেত, অরণ্যের গভীরে আছে এক রহস্যময় সোনার পাথরের দেশ — যেখানে একসময় দেবতারা থাকতেন, আর এখন সেখানে আছে অভিশপ্ত রাক্ষসরাজ্য।

রূপবতীর মনে কৌতূহল জন্মাল—সত্যিই কি রাক্ষসেরা দেবতাদের দেশ দখল করেছে? কেন কেউ সেখানে যায় না? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এক রাতে সে সিদ্ধান্ত নিল সাহসী অভিযানে যাওয়ার। সঙ্গী করল তার দাসী মালতী ও তার প্রিয় পাখি টুনটুনিকে। অন্ধকারে তারা হাঁটতে লাগল সেই অভিশপ্ত অরণ্যের দিকে। গাছগুলো বাঁকা, হাওয়ায় অদ্ভুত ফিসফিস শব্দ, মাঝে মাঝে চোখ জ্বলে উঠছিল গাছের কোটরে। কিন্তু রূপবতী ভয় পায়নি।

শেষমেশ তারা ঢুকল অরণ্যের মাঝখানে। হঠাৎ দেখা গেল—এক বিশাল সোনার পাথরের দেয়াল, যার ওপারে ছিল সেই রহস্যময় দেশ। সেখান থেকেই শুরু হলো রূপবতীর জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত অভিযান।

ধাপ ২: সোনার দেয়ালের দ্বাররক্ষী ও ধাঁধার পরীক্ষা

সোনার দেয়ালটা ছিল স্বচ্ছ, কিন্তু ছুঁতে গেলেই আগুনের মতো গরম। রূপবতী অবাক হয়ে ভাবল—এটা তো জাদু! হঠাৎই পাথরের ভেতর থেকে বের হয়ে এল এক অদ্ভুত চেহারার রাক্ষস—তার চোখ দুটো ছিল আগুনের মতো জ্বলজ্বলে, আর তার গলা ছিল গর্জনশক্তিতে ভরা। সে বলল, মানবকন্যা, কী সাহসে তুমি আমার দেশে এসেছো?

রূপবতী মাথা উঁচু করে বলল, আমি সত্য খুঁজতে এসেছি। শুনেছি এই দেশ একসময় দেবতাদের ছিল, এখন তোমাদের দখলে। আমি জানতে চাই কিভাবে, কেন?”
রাক্ষস হেসে বলল, তুমি যদি সত্য জানতে চাও, তাহলে তিনটি ধাপ পেরিয়ে প্রমাণ করতে হবে তুমি যোগ্য। প্রথম ধাপে তোমাকে একটি ধাঁধার উত্তর দিতে হবে।

সে বলল:

আমার পাখা নেই, তবু উড়ি,
আলো ছড়াই কিন্তু জ্বলি না,
আমায় ধরতে পারো না কেউ,
তবু আমায় চেনো সকলে।

রূপবতী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর বলল, তুমি আলো নয়, তুমি... স্বপ্ন! কারণ স্বপ্ন উড়ে বেড়ায়, আলো ছড়ায়, ধরা যায় না, তবু সবাই দেখে!

রাক্ষস থমকে গেল। তারপর হেসে বলল, বুদ্ধিমতী বটে! ঠিক বলেছো। যাও, সামনে যাও—কিন্তু পরের ধাপে তোমার সাহসের বড়ো পরীক্ষা হবে।
দেওয়ালের মাঝখানে একটি সিঁড়ি খুলে গেল। রূপবতী সাহস নিয়ে পা রাখল দ্বিতীয় ধাপে।

ধাপ ৩: বিষজল হ্রদ, বান্টু বানর আর দেবীর আশীর্বাদ

দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করে রূপবতী পৌঁছাল এক চমকপ্রদ হ্রদের পাড়ে। সেই হ্রদের পানি কালোচে ও ঘন ধোঁয়ায় আবৃত। দাসী মালতী বলল, এটা নিশ্চয় বিষজল। কেউ যদি এতে পড়ে, কঙ্কাল হয়ে যায়। রূপবতী ভাবল, কীভাবে পার হবে? কেউ একপাশে একটি মৃত পশুর হাড়গোড় দেখিয়ে ভয় বাড়িয়ে তুলল।

ঠিক তখনই একটি মিষ্টি কণ্ঠস্বর শোনা গেল। ছোট্ট একটি বানর এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আমি বান্টু। আমি এই হ্রদের আশপাশে থাকি। আমি জানি, কিভাবে এটি পার হতে হয়।

রূপবতী জিজ্ঞেস করল, তুমি কি রাক্ষসদের দাস?
বান্টু বলল, না, আমি প্রাচীন দেবীর আশীর্বাদপ্রাপ্ত।

এই হ্রদের নিচে দেবীর মন্দির আছে। যিনি তাকে নমস্কার করবে, তার পথে বিষ কিছুই বাধা হতে পারবে না।রূপবতী বান্টুর দেখানো পথে পাথরের নিচে গিয়ে সেই দেবীমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করল: হে শক্তির অধিষ্ঠাত্রী, আমাকে সত্যের পথে চলার শক্তি দিন।

হঠাৎ করে হ্রদের পানি আলোকিত হয়ে উঠল, আর সেই আলো রূপবতীর গলায় এক রত্নমালা পরিয়ে দিল। মালা পরতেই হ্রদের ওপরে একটি সোনার সেতু উদয় হলো।

রূপবতী, মালতী ও বান্টু সেই সেতু ধরে পার হয়ে গেল তৃতীয় ধাপে—যেখানে তাদের সামনে অপেক্ষা করছিল আরও ভয়ংকর বিপদ।

ধাপ ৪: রক্তনখ রাক্ষস ও বুদ্ধির ফাঁদ

তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করতেই চারদিকে ধোঁয়ায় ভরে গেল সব। বান্টু বলল, এখানে থাকে রক্তনখ নামের ভয়ানক রাক্ষস। তার নখে লুকানো বিষ আছে—এক আঁচড়েই মৃত্যু।
হঠাৎ এক গর্জনের শব্দে পাহাড় কেঁপে উঠল। মাটিতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। আর সেখান থেকে বের হয়ে এল এক রক্তচক্ষু বিশাল দেহী রাক্ষস—রক্তনখ। সে চেঁচিয়ে বলল, তুমি পরবর্তী ধাপে আসার সাহস করেছো? এবার দেখো, কেমন লাগে আমার নখের ছোঁয়া!

রূপবতী ভয় না পেয়ে বলল, আমি যুদ্ধ করতে আসিনি, সত্য খুঁজতে এসেছি। তুমি কি আমার সঙ্গে যুদ্ধ না করে ধাঁধায় হারতে রাজি?
রাক্ষস হেসে বলল, ধাঁধায় হারিনি কখনো। বলো তোমার ধাঁধা।

রূপবতী বলল:

আমায় ভাঙলে পাবা শব্দ,
শব্দ বানালে পাবা জ্ঞান।
নীরবতাই আমার দান,
আমি আছি মানুষের প্রাণ।

রাক্ষস ভুরু কুঁচকে বসে গেল। সে ভাবছে, ভাবছে... হঠাৎ সে চেঁচিয়ে বলল, নাহ! আমি জানি না!
রূপবতী বলল, উত্তর হলো—ভাষা।

রাক্ষস রাগে গর্জন দিয়ে দানব রূপে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল, কিন্তু রূপবতী তখন বান্টুর দেওয়া গাছের লতা দিয়ে তার পা বেঁধে ফেলল। রাক্ষস পড়ে গেল, আর সেই মুহূর্তে তার নখ নিজেই তাকে আঘাত করল! সে কাতরাতে লাগল, কিন্তু রূপবতী বলল, যদি সত্য জানতে চাও, হিংসা ছাড়ো।

রক্তনখ কেঁদে ফেলল। বলল, আমাদের ওপর অভিশাপ ছিল। যে সত্যপথে তিন ধাপ পার হয়ে আমাদের হারাবে, তার হাতে আমরা মুক্ত হবো। তুমি সেই মুক্তিদাত্রী।
রাক্ষস মিলিয়ে গেল ধোঁয়ায়। সামনে খুলে গেল অন্ধকার গুহার দরজা, যেখানে অপেক্ষা করছিল চূড়ান্ত রাক্ষস—কালনাগ রাজার সাক্ষাৎ।

ধাপ ৫: কালনাগ রাজার চ্যালেঞ্জ ও আত্মপরীক্ষা

গুহার ভেতরে পা রাখতেই চারপাশে অন্ধকার। কোথাও কোনো আলো নেই। শুধু একটা কণ্ঠস্বর: রূপবতী, এতদূর এসেছো তুমি, এবার নিজেকে চিনতে হবে!
আলো জ্বলে উঠল ধীরে ধীরে, আর সামনে দেখা গেল এক বিশাল আয়না। আয়নার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক রূপবতীর মতো আরেকজন মেয়ে। তবে তার চোখে আগুন, ঠোঁটে বিদ্রূপ, আর কণ্ঠে ছিল রাক্ষসের গলা।

কালনাগ বলল, এই তোমার ছায়া—তুমি যদি নিজেকে সত্যিকারের চিনতে না পারো, তবে চিরকাল এখানেই বন্দি থাকবে।

রূপবতী ধীরে ধীরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মেয়েটি বলল, তুমি কি জানো, আমি তোমার ভেতরের ভয়, অহংকার, এবং লোভ? তুমি যদি আমাকে স্বীকার না করো, আমি তোমার জায়গা দখল করে নেবো!

রূপবতী চোখ বন্ধ করল। সে স্মরণ করল—সে কেন এসেছে, কী জন্য তার যাত্রা। তারপর চোখ খুলে বলল, আমি ভয় পেয়েছি, মানি। অহংকার করেছি, তাও মানি। তবে আমি চেষ্টা করেছি নিজেকে শোধরাতে। আমি সত্যের পক্ষে।

আয়নার মেয়েটি ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। তখনই সামনে দেখা দিল কালনাগ রাক্ষস—শুধু আর নয় রাক্ষস, বরং এক দেবতার রূপে। সে বলল, তুমি সত্যের যোগ্য। এই দেশ একসময় দেবতাদের ছিল, কিন্তু মানুষের লোভে দেবতা দূরে সরে যান, আর রাক্ষসেরা আসন নেয়। আজ তুমি সেই আসন ফেরত নিলে। আমাদের অভিশাপ মুক্ত হলো।

তারপর চারদিকে আলো ছড়িয়ে গেল। সোনার পাথরের দেশ আবার হয়ে উঠল এক শান্তির রাজ্য।

ধাপ ৬: রাজ্যে প্রত্যাবর্তন ও গল্পের শিক্ষণীয় বার্তা

রূপবতী, মালতী ও বান্টু ফিরে এলো তাদের নিজ রাজ্যে। রাজার চোখে জল—তিনি ভেবেছিলেন, তার মেয়ে হয়তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু যখন রূপবতী ফিরে এল, সবাই বিস্ময়ে হতবাক।

রূপবতী রাজসভায় দাঁড়িয়ে বলল, আমি এমন একটি জায়গা ঘুরে এসেছি, যেখানে ভয়, লোভ ও হিংসা রাজত্ব করত। কিন্তু আমরা যদি সত্য, সাহস ও ক্ষমার পথ বেছে নিই, তাহলে সেই অন্ধকারকে আলোতে বদলানো যায়।

রাজা রূপেশ চন্দ্র ঘোষণা দিলেন, আজ থেকে রূপবতী এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ রানী। সে শুধু আমার কন্যা নয়, সে আমাদের মুক্তিদাত্রী।

বান্টুকে বানানো হলো রাজসভার উপদেষ্টা বানর, আর মালতীকে দেওয়া হলো ‘সাহসিনী দাসী’ উপাধি। সোনার পাথরের দেশের প্রবেশপথ বন্ধ করা হলো, আর তার সামনে স্থাপন করা হলো একটি ফলক, যেখানে লেখা ছিল:

যে নিজের ভয়কে জয় করে, সে-ই আসল রাজকুমারী বা রাজপুত্র।

এভাবে শেষ হয় রূপবতীর রাক্ষসযাত্রা, যা আজও ঠাকুরমার মুখে মুখে শোনা যায়

এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url