Educational Stories for Kids: Mithu's Clever Machine and the Triumph of Friendship

 মিঠুর বুদ্ধির যন্ত্র ও বন্ধুত্বের জয়

Educational Stories for Kids


✨ ধাপ ১: জঙ্গলের চঞ্চল বন্ধু আর এক অদ্ভুত যন্ত্রের আগমন

জঙ্গলের গভীরে একটি বটগাছ ছিল, যার ডালে ডালে খেলত এক চঞ্চল ছোট বানর – তার নাম ছিল মিঠু। মিঠু ছিল জঙ্গলের সবার প্রিয়। তার লাফালাফি, মুখ টিপে হাসা, গাছের পাতা দিয়ে তালি বাজানো – সবই জঙ্গলের বাসিন্দাদের আনন্দ দিত। সে ছিল খুব দুষ্টু, তবে ভীষণ বুদ্ধিমান। আর তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুরা ছিল — ছোট্ট খরগোশ টিমু, ভারী শরীরের জন্য সব সময় ধীর গতির কচ্ছপ কুটি, আর পানিতে লাফিয়ে বেড়ানো ছোট হাতি মটুক

একদিন সকালে মিঠু কলা খেয়ে ডালে ডালে খেলছিল। এমন সময় সে শুনতে পেল একটি অদ্ভুত শব্দ — গড়র গড়র গর্জন গর্জন!

সে দ্রুত নিচে নেমে এল। টিমু আর মটুক তখন পাশের ঝোপে লুকিয়ে কাঁপছে। কুটি তো নিজেকে তার শক্ত খোলসের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলেছে।

মিঠু ভয় না পেয়ে বলল, এই শব্দ কোথা থেকে আসছে?

চার বন্ধু একসঙ্গে সাহস করে শব্দের উৎসের দিকে এগিয়ে গেল। তারা হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলের এক পুরোনো অংশে পৌঁছায়, যেখানে মানুষ খুব একটা আসে না। সেখানেই তারা দেখে একটা রঙচঙে লোহার বাক্স পড়ে আছে গাছের গোড়ায়। বাক্সের পাশে তার লেপ্টে থাকা একটা বোতাম। গর্জন আসছে সেই বাক্স থেকেই!

এইটা তো মানুষের কিছু! টিমু বলল।

বোতামটা চেপে দেখি নাকি? মিঠু বলল সাহস করে।

বোতাম চেপে দিতেই এক চমকে দেওয়া দৃশ্য! যন্ত্র থেকে গান বেজে উঠল — টিং টিং টিং! আমি গান গাই, আমি নাচি, বন্ধুরা সবাই হাসে হে হে!

চার বন্ধু এত মজা পেল যে হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগল। ভয় পাওয়া শব্দটা যে আসলে একটা গান যন্ত্র ছিল, সেটা বুঝতে পেরে সবাই আনন্দে নেচে উঠল।

কিন্তু মিঠুর মাথায় তখনো চিন্তার ভাঁজ। সে জানত, মানুষের জিনিস মানেই কিছু না কিছু গন্ডগোল আছে। আর ঠিক তখনই, শুরু হয় পরের অঘটন।

✨ ধাপ ২: গুপ্তধনের গুজব আর শিয়ালের চক্রান্ত

গানের যন্ত্রটি নিয়ে চার বন্ধু নিজেদের মজায় কাটাতে লাগল। ওটা দিয়ে তারা বনভোজনের সময় গান চালাত, নাচত আর নতুন নতুন খেলা খেলত। কুটি মাঝে মাঝে নিজের খোলস ঠুকিয়ে ছন্দে বাজাত, মটুক শুঁড় নাচিয়ে হাসাত, টিমু লাফিয়ে ছন্দ মিলাত — আর সবার নেতা হয়ে মিঠু নতুন নতুন ধামাকা গান চালাত।

কিন্তু একদিন, দূর থেকে সবকিছু নজরে রাখছিল শিয়াল টিকু। সে ছিল জঙ্গলের সবচেয়ে ধূর্ত প্রাণী। নিজের স্বার্থ ছাড়া কাউকে কখনও কিছু দেয়নি। সে ভাবল, এই যন্ত্র দিয়ে যদি সবাইকে ফাঁকি দিয়ে কিছু

পাওয়া যায়?

পরদিন সকালেই টিকু গুজব ছড়াতে লাগল, এই গান যন্ত্র আসলে সাধারণ কিছু না, এটা এক গোপন যাদুকরী বাক্স। গান বাজালেই গুপ্তধনের মানচিত্র বের হয়!

অল্প সময়েই পুরো জঙ্গলে রটনা ছড়িয়ে পড়ল – বানর মিঠুর কাছে গুপ্তধনের চাবি আছে!

ভাল্লুক, হরিণ, কাঠবিড়ালি, এমনকি পেঁচাও এসে জিজ্ঞেস করল, মিঠু, আমাদেরও গুপ্তধন দে!

মিঠু অবাক হয়ে বলল, না না! এটা তো একটা খেলনা! কোনো গুপ্তধন নেই এখানে!

কিন্তু কেউ বিশ্বাস করল না। সবাই মিঠুকে সন্দেহ করতে শুরু করল।

ঠিক তখনই টিকু ঘোষণা দিল, আমরা চাই, মিঠুর বিচার হোক। সে যদি সত্যি বলে, তাহলে প্রমাণ দিক!

পরের দিন ডাকা হলো এক বিশাল বনসভা, যেখানে সব প্রাণী আর সিংহ রাজা হাজির থাকবেন।

মিঠুর মন খারাপ, সে ভাবল, আমি তো কিছুই করিনি। সবাই আমার ওপর কেন এমন করছে?

তখন টিমু তার পাশে এসে বলল, তুই ভেবেছিস আমরা তোকে একা ছাড়ব?

মটুক বলল, তুই আমাদের নেতা, আমরা তোর পাশে আছি! কুটি ধীরে ধীরে বলল, যে সত্যি কথা বলে, সে ভয় পায় না!

মিঠুর চোখে জল চলে এলো। সে বুঝল, বন্ধুদের ভালোবাসা থাকলে কোনো ভয়ই বড় নয়।

✨ ধাপ ৩: সত্যের জয় ও বন্ধুত্বের মহিমা

সিংহ রাজার বিশাল আসনে বসে আছেন রাজা নিজে। সামনে সারি সারি প্রাণী – কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে। আজকের বনসভা নিয়ে সবার মধ্যে কৌতূহল, উত্তেজনা আর কিছুটা রাগও।

শিয়াল টিকু এসে ঝুঁকে বলল, রাজারাজ, মিঠু আমাদের সঙ্গে মিথ্যা বলেছে। সে যন্ত্রে গুপ্তধনের কথা জেনেও গোপন রেখেছে। আমরা চাই, তার বিচার হোক!

সিংহ রাজা গম্ভীর স্বরে বললেন, মিঠু, তুমি কিছু বলবে?

মিঠু শান্তভাবে সামনে এল। যন্ত্রটি তার হাতে। সে

বলল, রাজারাজ, আমি মিথ্যা বলিনি। বরং যারা আমার ওপর ভুল অভিযোগ তুলেছে, তারা আমাদের একতাকে ভাঙতে চেয়েছে।

সে বোতাম চেপে যন্ত্রটি চালু করল — সেই চেনা গান বেজে উঠল  টিং টিং টিং! আমি গান গাই, আমি নাচি, বন্ধুরা সবাই হাসে হে হে!

তারপর সে যন্ত্রটা খুলে দেখাল, ভেতরে কেবল ব্যাটারি, তার আর স্পিকার – কোনো মানচিত্র, কোনো গুপ্তধনের সংকেত নেই।

সিংহ রাজা প্রশ্ন করলেন, টিকু, তুমি কি প্রমাণ দিতে পারো তোমার অভিযোগের?

টিকু গলায় জড়তা নিয়ে বলল, ও… মানে… আমি শুধু গুজব শুনে বলেছি…

খরগোশ টিমু চিৎকার করে বলল, তাহলে তুমি মিথ্যা বলেছ!

রাজা তখন গর্জে উঠলেন, মিথ্যা বলা ও গুজব ছড়ানো জঙ্গলে কঠিন অপরাধ। টিকু, তুমি এক মাস জঙ্গল পরিষ্কার করার কাজ করবে। সত্য না জেনে কোনো অভিযোগ কেউ তুলবে না — এটাই হবে নতুন নিয়ম।

সবাই হাততালি দিল। মিঠুকে সামনে ডেকে রাজা বললেন, তুমি শুধু বুদ্ধিমানই নও, তুমি সাহসী, সত্যবাদী আর বন্ধুবৎসল। তুমি আজ থেকে জঙ্গলের বুদ্ধির বন্ধু!

সব বন্ধু মিঠুকে জড়িয়ে ধরল। গান আবার বেজে উঠল, এবার আনন্দ আর সত্যের সুরে।

জঙ্গল আবার হাসল। আর শিশুদের শেখাল, সত্য ও বন্ধুত্ব সব সময় জয়ী হয়।

✨ ধাপ ৪: টিকুর অনুশোচনা আর জঙ্গলের নতুন শিক্ষা

টিকু তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখে দেখা যাচ্ছিল অনুশোচনার ছাপ। সে ভাবছিল, কেন আমি এমন করলাম? আমি তো চাইনি কাউকে কষ্ট দিতে, শুধু ঈর্ষায় ভুল করে ফেলেছি…

পরের দিন থেকেই টিকু সত্যিই জঙ্গল পরিষ্কারের কাজে লেগে গেল। প্রথমে অনিচ্ছা ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল – সেবা করলে যে আনন্দ, তা অন্য কিছুতে নেই। বানর মিঠু ও তার বন্ধুরা তাকে দূরে ঠেলে দেয়নি, বরং মাঝে মাঝে ফল দিয়ে সাহায্য করত, কুটি তো নিজে এসে পানির হাঁড়ি টানত।

একদিন টিকু এক কোণায় বসে কেঁদে ফেলল। মিঠু এগিয়ে গিয়ে বলল, বন্ধু হতে কখনো দেরি হয় না। সত্যি অনুতপ্ত হলে তুমি আমাদের বন্ধু হয়ে থাকতে পারো।

টিকু চোখ মুছে বলল, তোমরা এত ভালো, অথচ আমি ঈর্ষা করেছিলাম! এখন বুঝি—বন্ধু মানে ভালোবাসা, মজা নয় শুধু দায়িত্বও।

তারপর সবাই মিলে একটা বন্ধুত্বের মঞ্চ তৈরি করল। সেই মঞ্চে সবাই গান করে, ছবি আঁকে, নিজের গল্প বলে। আর সেই যন্ত্র? সেটা এখন জঙ্গলের পাঠশালার সঙ্গীত যন্ত্র!

সিংহ রাজাও আসেন মাঝে মাঝে, শিশুদের বলেন, এই মঞ্চ থেকে আজ জঙ্গল শিখেছে—সত্য, ক্ষমা আর বন্ধুত্বই আসল রত্ন।

মিঠু, টিমু, কুটি, মটুক আর এখন টিকুও – সবাই মিলে

একসঙ্গে হাসে, খেলে আর শেখে। আর গানের সুর বাজে

টিং টিং টিং! আমি গান গাই, আমি নাচি, বন্ধুরা সবাই হাসে হে হে!

গল্প শেষ নয়... কারণ বন্ধুত্বের গল্প কখনো শেষ হয় না।

এই গল্প থেকে আমরা যে যে বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারি: 

👉 সত্যবাদিতা, বন্ধুত্ব, ও ক্ষমা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান গুণ।

👉 গুজব ছড়ানো ও হিংসা মানুষের ক্ষতি ডেকে আনে, আর অনুশোচনা ও ভালো কাজ মানুষকে পরিবর্তনের সুযোগ দেয়।


👉 প্রকৃত বন্ধুরা শুধু মজার সময় নয়, কঠিন সময়েও পাশে থাকে।

👉 একতা ও ভালোবাসা থাকলে জঙ্গল বা সমাজ — দুটোই হয় শান্তিময়।

এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url