Success story
ধাপ ১: মাটির ঘরের ছেলে (প্রায় ৯০০ শব্দ)
সেদিন ছিল বর্ষার শুরু। আকাশ যেন হঠাৎ হঠাৎ রেগে উঠছে, আর হরিদাস বসে আছে বৃষ্টির ফোঁটার নিচে কাঁদা মাটির দরজায়। তার বয়স তখন মাত্র ১১। বাবা একজন দিনমজুর—যিনি প্রতিদিন নতুন কাজ খোঁজেন, আর মা বাসায় ধোপার কাজ করেন। সংসারে অভাব লেগেই আছে। ভাত-ডাল তো কল্পনা, অনেক দিন লবণ-ভাতই আশীর্বাদ হয়ে আসে।
হরিদাসের স্কুলে যাওয়ার খুব ইচ্ছা। গ্রামের স্কুলটি মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে, কিন্তু খালি পায়ে হাঁটতে হয়। শরীরে ছেঁড়া পাঞ্জাবি, হাতে পুরোনো খাতা আর ভাঙা একটা পেনসিল—এই তার সম্বল। তবুও সে ক্লাসে সবচেয়ে মনোযোগী। শিক্ষকরা অবাক হয়ে
বলে, এই ছেলে একদিন বড় হবে!
কিন্তু সেই ‘বড় হওয়া’ যেন তার কপালে নেই। বাবা একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন, আর কাজ বন্ধ। হরিদাসকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়—স্কুল না খেয়ে থাকা? সে ভোরে উঠে বাজারে গিয়ে বস্তা টানে, মানুষের ব্যাগ বহন করে। সন্ধ্যায় স্কুলে যায়। এভাবেই শুরু হয় তার লড়াই।
ধাপ ২: কুয়াশায় ঢাকা স্বপ্ন (প্রায় ৯০০ শব্দ)
হরিদাস ক্লাস সেভেনে উঠে, কিন্তু তার জীবনে তখনো বিদ্যুৎ নেই। মোমবাতি বা কুপি দিয়ে রাতে পড়াশোনা করে। বন্ধুরা যখন মোবাইলে গেম খেলে, হরিদাস তখন গণিতের অংকে ডুবে থাকে। মা তাকে বলেন, বাবারে, কষ্ট কর কিন্তু হাল ছাড়িস না। আমরা গরিব, কিন্তু তুই আলোর পথ দেখাবি।
একদিন গ্রামে এক নতুন শিক্ষক আসেন—তার নাম মঈন স্যার। তিনি বোঝেন হরিদাস আলাদা। হরিদাসকে আলাদা বই দেন, কোচিংয়ে ডাকেন, এমনকি বাসায় পুরোনো জামা, মোজা, জুতো পাঠান। সেই থেকেই হরিদাসের মধ্যে আলো জ্বলে ওঠে।
তবে দারিদ্র্য সহজে পিছু ছাড়ে না। বাবা আবার অসুস্থ, মা কাজ হারায়, খাওয়ার কষ্ট আরও বেড়ে
যায়। তবু হরিদাস রাতে কাজ করে, দিনে পড়ে। মঈন স্যার বলেন, তুই একদিন বিসিএস ক্যাডার হবি, আমার কথা মনে রাখিস।
হরিদাস তখন সেভাবেই স্বপ্ন দেখে—একটি অফিস রুম, বইয়ে ভরা টেবিল, কাঁধে দায়িত্ব।
ধাপ ৩: এসএসসি থেকে বিসিএসের স্বপ্ন (প্রায় ৯০০ শব্দ)
এসএসসিতে হরিদাস গোল্ডেন পায়। স্কুলে সবাই আনন্দে চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু সে জানে তার জন্য যুদ্ধ এখন শুরু। কলেজে ভর্তি হতে হলে ফি লাগবে, ইউনিফর্ম লাগবে, কিন্তু টাকাই নেই। সে একটা চায়ের দোকানে কাজ নেয়, রাতে পড়ে, দিনে কাজ করে।
কলেজে সে আরেকটি প্রতিভাবান ছেলেকে পায়, নাম রাজীব। দুজনে মিলে পড়াশোনার জুটি তৈরি করে। কেউ কারো ব্যাকআপ। রাজীব কম্পিউটার জানে, সে হরিদাসকে শেখায় কীভাবে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়।
এই সময়েই হরিদাস প্রথমবার বিসিএস শব্দটি শোনে। সে বুঝতে পারে, এই চাকরি শুধু পেশা নয়, এটি সম্মান, মর্যাদা, আর নিজের মতো করে কিছু করার
সুযোগ।
তারপর শুরু হয় বিসিএস প্রস্তুতির ধাক্কাধাক্কি। ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পায়, সেখান থেকে ফাইনাল ইয়ারে উঠে একবার ডিপ্রেশনে পড়ে—খুবই কষ্টের সময়। তখন রাজীব তাকে বলেছিল, হরিদাস, তুই আলোর জন্য জন্মেছিস, অন্ধকারে হারিস না।
ধাপ ৪: আলোর মুখে শেষ প্রহর (প্রায় ৯০০ শব্দ)
বিসিএস পরীক্ষা খুব কঠিন। হরিদাস তার সর্বস্ব দিয়ে পড়ে। রাত ২টা, ভোর ৫টা—সে নিজের রুটিনে কোনো ছাড় দেয় না। ডিএসসিতে গিয়ে কোচিং করে, পুরোনো প্রশ্নপত্র পড়ে, নিজের ভুল ধরে, নিজেকে সাজায়।
বাবা তখন পক্ষাঘাতে অসুস্থ, মা সারা দিন অন্যের বাসায় কাজ করে। হরিদাস তার প্রথম প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ফেল করে! সে কাঁদে, ভেঙে পড়ে, কিন্তু থামে না। দ্বিতীয়বার আবার দেয়, এবার উত্তীর্ণ হয়।
তবে লিখিত পরীক্ষা ছিল আরেক যুদ্ধে নামার মতন। বন্ধুদের সহায়তা, স্যারের নির্দেশনা আর নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে এগিয়ে নেয়। অবশেষে, ভাইভা পর্যন্ত পৌঁছায় সে।
ভাইভার দিন তার পরনের জামাটা ঠিকমতো আয়রন করা ছিল না, তবু আত্মবিশ্বাসে ভরা সে উত্তর দেয়, “আমি গরিব ছিলাম, কিন্তু স্যার, আমি এখন শুধু আমার পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্য কিছু করতে চাই।
ধাপ ৫: শেষ আলো, শুরু নতুন গল্প (প্রায় ৯০০ শব্দ)
সেদিন গ্রামে উৎসব। হরিদাসের নাম বিসিএস গেজেটে এসেছে। সে অ্যাডমিন ক্যাডারে নির্বাচিত হয়েছে। লোকজন ফুল নিয়ে আসে, সাংবাদিক আসে, মা কাঁদে আনন্দে। তার ঘরে প্রথমবার বিদ্যুৎ আসে, লোকজন তাকে আলোর ছেলে বলে।
সে তার বাবার জন্য চেয়ার কেনে, মায়ের জন্য একটা শাড়ি, আর স্কুলে ৫০টা বই দান করে। সে এখন নিজেই গরিব ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ চালু করে। মঈন স্যার তাকে বলেন, তুই এখন অন্যের আলোকবর্তিকা। তুই আমার গর্ব।
গল্প এখানেই শেষ না। হরিদাস এখন নিজের মতো করে গ্রামের স্কুলে যায়, ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়। তারা কেউ বলতে পারে না, আমি গরিব, আমি পারব না। কারণ তারা জানে, আলো খোঁজে হরিদাস” একদিন ঠিকই জ্বলে উঠেছিল।
Comments
Post a Comment