Incredible Facts: Medieval Scholarship Touched by the Quill Pen

 ধাপ ১: প্রাচীন সভ্যতায় লেখার সূচনা ও আদিম কলমের জন্ম

লেখার ইতিহাস প্রায় ৫০০০ বছরের পুরোনো। মানুষের মস্তিষ্কে যখন চিন্তা প্রকাশের ইচ্ছা জন্ম নিল, তখন থেকেই তারা ভাবনাগুলো চিহ্ন ও প্রতীকের মাধ্যমে রূপ দিতে শুরু করে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, মিশর, সিন্ধু ও চীন সভ্যতায় লেখার জন্য কাদামাটির ফলকে খোদাই করা হতো। তারা ব্যবহার করত একধরনের ধারালো কাঠি, যাকে বলে স্টাইলাস। স্টাইলাস দিয়ে তারা কাদায় অক্ষর আকৃতির চিহ্ন এঁকে রাখত, যেটি পরে শুকিয়ে লেখা স্থায়ী হতো।

এদিকে প্রাচীন মিশরীয়রা আবিষ্কার করেছিল প্যাপিরাস, যা একধরনের গাছের ছাল থেকে তৈরি হতো। এই কাগজে লেখার জন্য তারা ব্যবহার করত রিড পেন, যা ছিল বাঁশজাতীয় গাছের কাণ্ড কেটে তৈরি কলম। এতে কালির ব্যবহার শুরু হয়, যা বিভিন্ন গাছের রস, মিনারেল ও কয়লা গুঁড়া থেকে তৈরি হতো।

চীনারাও একই সময়ে কলম ও কালি ব্যবহারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। তারা বাঁশের কলম ব্যবহার করত এবং চাইনিজ ইঙ্ক তৈরি করত চাইনিজ পাইন গাছের রজন থেকে।

এই ধাপে লেখার উদ্দেশ্য ছিল বার্তা সংরক্ষণ, রাজাজ্ঞা প্রেরণ, ধর্মীয় রীতি ও প্রশাসনিক কাজ। তবে এগুলো ছিল অপ্রচলিত ও কষ্টসাধ্য। লিখতে হলে প্রথমে কাগজ তৈরি করতে হতো, স্টাইলাস বা রিড তৈরি করতে হতো এবং কালি তৈরি করতে হতো আলাদা উপায়ে।

এই প্রাথমিক লেখার সরঞ্জামগুলোই পরবর্তী যুগে কলমের বিবর্তনের ভিত্তি তৈরি করে। বলা যায়, মানবসভ্যতার ইতিহাসের শুরুতেই কলম ছিল এক মৌলিক অগ্রগতি।

ধাপ ২: পালক কলমের সূচনা ও মধ্যযুগের সাহিত্যচর্চা

খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে শুরু করে প্রায় ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপ ও ইসলামি বিশ্বে লেখার প্রধান উপকরণ হয়ে ওঠে পালক কলম (Quill Pen)। এই কলম তৈরি হতো সাধারণত রাজহাঁস, কাক, অথবা ঈগল পাখির ডানার বড় পালক থেকে। পালকটিকে কেটে একটি নির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়া হতো যাতে সেটি কালি ধরে রাখতে পারে ও সুন্দর করে কাগজে ছড়িয়ে দেয়।

কলমটি প্রথমে পানি বা অ্যালকোহলে ভিজিয়ে রেখে পরিশোধন করা হতো। এরপর ছুরি দিয়ে তীক্ষ্ণ কোণ করে কাটা হতো এবং একটি ছোট ছিদ্র করা হতো যা কালি ধরে রাখত। এই কলম দিয়ে লিখতে হলে বারবার কালিতে চুবাতে হতো। যদিও একটু ঝামেলা

ছিল, তবে এটি পালকের নমনীয়তা ও হালকা ওজনের কারণে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

পালক কলমের যুগে ইউরোপে গড়ে ওঠে অসংখ্য পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্যকর্ম। মঠের ভেতর ধর্মযাজকরা বসে বাইবেল, ধর্মগ্রন্থ, আইনবিধি এবং ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতেন এই পালক কলম দিয়েই। এছাড়া ইসলামি বিশ্বে কুরআনের হস্তলিখিত কপি, হাদীস, দর্শন, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যার নানা গ্রন্থও লেখা হতো এই কলমে।

এই যুগে লেখার কাগজ হিসেবে ব্যবহৃত হতো পার্চমেন্ট বা ভেলাম, যা ছিল গবাদিপশুর চামড়া থেকে তৈরি। অনেক সময় একটি গ্রন্থ লিখতে মাসের পর মাস লেগে যেত।

এ সময় লেখালিখি ছিল ধৈর্য ও শিল্পের পরিচায়ক। লেখকেরা কেবল তথ্য সংরক্ষণ করতেন না, বরং

প্রতিটি অক্ষর সুন্দরভাবে অলংকৃত করে লিখতেন, যা একধরনের শিল্প হয়ে ওঠে। এই ধাপে কলম শুধু একটি উপকরণ ছিল না, বরং সংস্কৃতি ও জ্ঞানের বাহক হয়ে ওঠে।

ধাপ ৩: ধাতব নিব ও কলমশিল্পের বাণিজ্যিক বিপ্লব

১৮শ শতকের শেষ দিকে পালক কলমের দীর্ঘ আধিপত্যের অবসান ঘটাতে শুরু করে ধাতব নিবযুক্ত কলম। এই কলমে কলমের অগ্রভাগে একটি ছোট ধাতব টুকরো লাগানো হতো, যা কালি ধরে রাখত এবং সূক্ষ্মভাবে কাগজে ফেলত। এটি ছিল টেকসই, বারবার পালক পাল্টাতে হতো না, এবং দীর্ঘসময় ধরে লেখা সম্ভব হতো।

প্রথমদিকে এই ধাতব নিবগুলো হাতে তৈরি হতো। পরে শিল্পবিপ্লবের প্রভাবে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে কলম তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। যেমন – Gillott, Esterbrook, Perry – এই কোম্পানিগুলো কলম তৈরির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই কলমগুলোর আরেকটি সুবিধা ছিল, এগুলো সহজে কারখানায় তৈরি হওয়ায় সস্তা ছিল এবং গণমানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিল। ফলে শিক্ষার প্রসারে এবং প্রশাসনিক কাজকর্মে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।

একইসঙ্গে উন্নত হয় কালির গুণমান। এই সময়ে কালি হতে শুরু করে জলভিত্তিক এবং আরও মসৃণ। কালি এখন বোতলে সংরক্ষণযোগ্য হয়, এবং কলমে ডিপ করে ব্যবহার করা সহজ হয়ে পড়ে।

১৮০০ সালের দিকে এই ধাতব কলম দিয়ে ইউরোপে শুরু হয় গণশিক্ষা আন্দোলন। বিদ্যালয়ে শিশুদের শেখানোর জন্য সহজ এবং সাশ্রয়ী এই কলম ব্যবহৃত হতে থাকে।

এই সময় কলম শিল্প একটি বাণিজ্যিক রূপ নেয়। বিজ্ঞাপন, প্যাকেজিং, এবং নতুন ধরনের ডিজাইনসহ কলম বিক্রি হওয়া শুরু করে। ধাতব নিব কলম কলম

ব্যবহারে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করে – যেখানে লেখালেখি হয়ে ওঠে অধিকতর গণতান্ত্রিক ও সবার জন্য উন্মুক্ত।

ধাপ ৪: ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কার – আত্মবাহী যুগের সূচনা

ধাতব নিব কলমের সীমাবদ্ধতা ছিল – বারবার কালি ডুবাতে হতো। এই সমস্যার সমাধানে ১৯শ শতকের শেষ দিকে আসে ফাউন্টেন পেন, বা আত্মবাহী কলম। এই কলমের ভিতরে কালি সংরক্ষণের জন্য একটি ছোট রিজার্ভার ছিল, যা থেকে ধীরে ধীরে কালি বের হয়ে নিব দিয়ে কাগজে পৌঁছাত।

১৮৮৪ সালে লুইস ওয়াটারম্যান নামক এক আমেরিকান প্রথম কার্যকর ও বাণিজ্যিকভাবে সফল ফাউন্টেন পেন তৈরি করেন। তাঁর তৈরি কলমে এমন একটি বাতাস চলাচল ব্যবস্থা ছিল যা কালি অতিরিক্ত বের হতে দিত না এবং লেখার অভিজ্ঞতা ছিল মসৃণ ও আনন্দদায়ক।

ফাউন্টেন পেন কালি ভরার জন্য পিস্টন, ড্রপার বা

পরবর্তীতে কার্টরিজ ব্যবস্থায় উন্নত হয়। এটি ছিল প্রথম কলম যা একবার ভরে অনেকক্ষণ লেখা যেত, ফলে লেখক, শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, মার্ক টোয়েন ও জর্জ বার্নার্ড শ’র মতো সাহিত্যিকেরা তাঁদের কীর্তিগ্রন্থ রচনা করেছেন এই কলমে। এই যুগে কলম শুধু লেখার যন্ত্র নয়, বরং ব্যক্তিত্ব ও রুচির প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

এছাড়া, ফাউন্টেন পেনের ডিজাইনে আসে শৈল্পিকতা। হাতের আকার, লিখনের ধরন অনুযায়ী কলমের আকৃতি নির্ধারণ হতে থাকে। কিছু কলম ছিল রূপা, সোনা ও মূল্যবান ধাতু দিয়ে বানানো, যেগুলো উপহার হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।

এই ধাপ কলম প্রযুক্তিকে দিয়েছে এক নতুন পরিসর

ব্যক্তিগত রুচি, প্রযুক্তিগত পরিপক্বতা এবং কর্মদক্ষতার সমন্বয়ে এক পূর্ণাঙ্গ কলম।

ধাপ ৫: বলপয়েন্ট থেকে ডিজিটাল কলম – আধুনিক যুগে কলমের রূপান্তর

২০শ শতকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন ছিল বলপয়েন্ট পেন। হাঙ্গেরির লাসলো বিউ ১৯৩৮ সালে এই কলম তৈরি করেন। এর মাথায় ছোট একটি বল ছিল, যা ঘূর্ণনের মাধ্যমে ভিতরের কালি বাইরে নিয়ে আসত। এই কলমে গাঢ়, তেলভিত্তিক কালি ব্যবহৃত হতো যা দ্রুত শুকাত ও ছড়িয়ে যেত না।

বলপয়েন্ট পেন অল্প দামে তৈরি হয়, সহজে携নযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী। এটি দ্রুতই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, ব্যাংক, আদালতসহ প্রায় সব জায়গায় এই কলম ব্যবহার হতে থাকে।

এরপর আসে জেল পেন, যার কালি আরও মসৃণ, লেখা আরও স্পষ্ট। এরপর রোলারবল পেন, কলমের

নকশা ও প্রযুক্তিতে বৈচিত্র্য এনে দেয়। বর্তমানে, ডিজিটাল স্টাইলাস বা স্মার্টপেন প্রযুক্তির উত্থানে কলম নতুন মাত্রা পেয়েছে। স্মার্টপেন ব্যবহার করে আজ ট্যাবলেট বা মোবাইল ডিভাইসে লেখা যায়, আঁকা যায়, এমনকি লেখাকে স্ক্যান করে ডেটাতে রূপান্তরও করা যায়।

এখন কলম শুধু কাগজে লেখার যন্ত্র নয়; এটি হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মাধ্যমেও মানুষের সৃজনশীলতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কলমের মাধ্যমে শুধু ভাষা নয়, এখন চিত্র, নোট, ডিজাইন ও স্বাক্ষরও রেকর্ড করা সম্ভব।

বলপয়েন্ট থেকে স্মার্টপেন – এই ধাপে এসে কলমের ভূমিকা পরিণত হয়েছে এক যুগান্তকারী যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে, যার প্রভাব প্রযুক্তি, শিক্ষা, শিল্প ও মানবসম্পর্কে অবর্ণনীয়।


এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url