The Lives of the Prophets: The Miraculous Story of Prophet Musa

 মুসা নবীর অলৌকিক ইতিহাস

The Lives of the Prophets

মুসা (আঃ)-এর জীবনী, যা একটি বিস্ময়কর এবং সাহসিকতার গল্প, মুসলিম জগতে শুধু একটি ধর্মীয় পাঠ নয়, বরং মানবতার জন্য একটি অমূল্য শিক্ষা হিসেবে পরিগণিত। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল পরীক্ষা, সাহস, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং প্রতিশোধের বিরুদ্ধে ধৈর্য ধারণের প্রতীক। তাঁর কাহিনী মানুষের জীবনে মহান শিক্ষা নিয়ে আসে, যা সমস্ত সময়েই প্রাসঙ্গিক। মুসা (আঃ)-এর জীবনী এমন একটি কাহিনী যা আমাদের দেখায় যে, সত্যের পথে চললে সব বাধা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, এবং আল্লাহর সাহায্য যে কোনো দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার শক্তি প্রদান করে।

The Lives of the Prophets

মুসা নবীর জন্ম: 

মুসা (আঃ)-এর জন্ম মিসরে, ফারাওয়ের শাসনকালে। ফারাও একসময় স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, একটি শিশু তার রাজত্বকে বিপন্ন করবে এবং তার শাসন ক্ষমতা নষ্ট করবে। এই ভয়ে, ফারাও একটি আদেশ জারি করেন যে, মিসরের সমস্ত ইসরাঈলী পুত্রসন্তানকে হত্যা করা হবে। মুসা (আঃ)-এর মা যখন জানলেন যে তাঁর ছেলে জন্ম গ্রহণ করেছেন, তখন তিনি দুঃশ্চিন্তা থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁকে নদীতে ভাসিয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা তার নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং মুসা (আঃ)-এর ঝুড়িটি ফারাওয়ের প্রাসাদে পৌঁছে যায়। ফারাওয়ের স্ত্রীর কাছে মুসা (আঃ) দত্তক হন।

এটি ছিল আল্লাহর পরিকল্পনা, কারণ মুসা (আঃ)-এর হাতেই ছিল পরবর্তীতে ফারাওকে পরাজিত করার

এবং বনি ইসরাঈলকে মুক্তি দেওয়ার মিশন। যদিও ফারাও তাকে দত্তক গ্রহণ করেছিলেন, তিনি জানতেন না যে, একদিন এই শিশুটি তার জন্য শত্রু হবে।

মুসা আঃ এর শৈশব ও যুবক বয়স:

মুসা (আঃ)-এর শৈশব ছিল অন্য যে কোনো শিশুর মতো, তবে তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর বার্তা প্রচার করা। তিনি ফারাওয়ের প্রাসাদে পালিত হলেও, তার মনের মধ্যে ইসরাঈলীদের প্রতি এক ধরণের সহানুভূতি ছিল। একদিন, মুসা (আঃ) এক মিসরীয় নাগরিককে একটি ইসরাঈলী কর্মীকে অত্যাচার করতে দেখেন, এবং তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই মিসরীয়কে আঘাত করেন, যার ফলে সে মারা যায়। মুসা (আঃ)-এর পক্ষে এটি একটি ভুল ছিল, তবে তাঁর হৃদয়ে ছিল ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা।

মুসা (আঃ) দ্রুত তাঁর অপরাধটি উপলব্ধি করেন এবং

আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যদিও মুসা (আঃ)-এর অপরাধ ছিল, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করেন এবং তাঁকে পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুত করেন। এই ঘটনার পর, মুসা (আঃ) মিসর থেকে পালিয়ে মাদিয়ান চলে যান, যাতে তার জীবন নিরাপদ থাকে।

ঝুড়িতে ভাসিয়ে দেওয়া:

আল্লাহর ওহী পেয়ে মুসা (আঃ)-এর মা তাঁকে একটি ঝুড়িতে রেখে নীল নদে ভাসিয়ে দেন। সাধারণ চোখে এটি ছিল এক মায়ের অসহায় সিদ্ধান্ত, কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনায় এটাই ছিল সবচেয়ে নিরাপদ ব্যবস্থা। শিশুটিকে যেভাবে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, তা ছিল ঈমানের এক অনন্য নিদর্শন।

দশটি বিপদ না দিল হওয়ার সূচনা দিন:

ফারাও মুসার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলে আল্লাহ তাঁর জাতির ওপর দশটি আজাব পাঠান—উপদ্রব, ব্যাঙ, উকুন, রক্ত, খরা ইত্যাদি। প্রতিবারই ফারাও তওবা করে আবার ফিরেও যায়।

মিশরীয়কে হত্যা করার দিন:

যুবক বয়সে মুসা (আঃ) একদিন শহরে বেরিয়ে দেখেন, এক মিসরীয় লোক একজন ইসরাঈলীকে প্রহার করছে। তিনি অন্যায় সহ্য করতে না পেরে ঘুষি মারেন, যা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে মিসরীয়টি মারা যায়। যদিও এটা দুর্ঘটনাবশত, তবুও এটি তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে।

দুই তরুণীকে সাহায্য করার দিন:

মুসা (আঃ) দেখেন দুই তরুণী কূপের পাশে দাঁড়িয়ে, কিন্তু লোকের ভিড়ে পানি তুলতে পারছে না। তিনি এগিয়ে গিয়ে তাঁদের পশুদের পানি তুলতে সাহায্য করেন। তাঁর চরিত্র, দয়া ও ভদ্রতার এই আচরণ পরবর্তী জীবনের ভিত্তি রচনা করে।

বিবাহ ও চাকরির চুক্তির দিন:

শুয়াইব (আঃ) তাঁর এক কন্যাকে মুসা (আঃ)-এর সাথে বিবাহ দেন এই শর্তে যে, তিনি আট বা দশ বছর তাঁকে কাজ করে দেবেন। এটি ছিল তাঁর জীবনের একটি স্থিতিশীল ও প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যায়।

প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ফারাওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: 

মুসা (আঃ) যখন পরিণত বয়সে পৌঁছালেন, তখন তিনি মিসরের জনগণের দুর্দশা এবং অত্যাচারের বিষয়ে সচেতন হন। একদিন, যখন তিনি মিসরের একজন ইসরাঈলীকে হত্যাকারী এক মিসরীয়কে আঘাত করতে দেখেন, তখন তিনি নিজের প্রতিরোধ শক্তি প্রযোজ্য করেন। এই ঘটনাটি মুসা (আঃ)-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল, কারণ তিনি আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং পরবর্তী সময়ে মিসরের শাসকের কাছে সঠিক পথ অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন।

এ ঘটনার পর, মুসা (আঃ) ফারাও থেকে পালিয়ে মাদিয়ান চলে যান, যেখানে তাঁর পরবর্তী জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটতে থাকে।

লাঠি সাপে রূপান্তর হওয়ার দিন:

আল্লাহ তাঁকে দুটি মুজিযা দেন—একটি ছিল তাঁর লাঠি সাপে পরিণত হওয়া। প্রথমবার লাঠি মাটিতে ফেলে তা সাপ হতে দেখে মুসা (আঃ) ভয় পেয়ে যান। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে সাহস জোগান। এই দিন ছিল অলৌকিকতার সূচনা।

মাদিয়ান এবং শুয়াইব আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ:

মাদিয়ান গিয়ে মুসা (আঃ) দুটি নারীকে দেখতে পান, যারা কূপ থেকে পানি তুলতে পারছিল না। মুসা (আঃ) তাদের সাহায্য করেন এবং তাদের জন্য পানি তুলে দেন। এরপর, শু'আইব (আঃ), একজন ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং মাদিয়ানের নেতা, মুসাকে আতিথ্য দেন। শু'আইব (আঃ) মুসাকে তাঁর কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং মুসা (আঃ) সেখানে অনেক বছর কাটান।

এটি মুসা (আঃ)-এর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, কারণ শু'আইব (আঃ)-এর কাছ থেকে তিনি ন্যায়ের পথে চলার শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও ভরসা স্থাপন করেন।

মদইয়ানে আশ্রয়: 

মুসা (আঃ) মিসর থেকে পালিয়ে যান ও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মদইয়ান নামক এলাকায় পৌঁছান। সেখানে তিনি একটি কূপের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এমন সময় দেখেন দুই তরুণী তাঁদের পশুদের পানি পান করাতে পারছে না। তিনি সাহায্য করেন এবং পরে তাঁদের পিতা হযরত শুয়াইব (আঃ)-এর বাসায় আমন্ত্রণ পান।

শুয়াইব (আঃ) মুসা (আঃ)-এর চরিত্রে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে তাঁর এক কন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন। শর্ত ছিল তিনি আট বা দশ বছর তাঁকে সাহায্য করবেন। এভাবে মুসা (আঃ) এক নিরাপদ পরিবেশে সংসার জীবন শুরু করেন ও আত্মিকভাবে পরিণত হতে থাকেন।

ফারাওকে আহ্বান:

শু'আইব (আঃ)-এর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের পর, মুসা (আঃ)-কে আল্লাহ ফের মিসরে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন। আল্লাহ মুসা (আঃ)-কে ফারাও এবং তার শাসনের বিরুদ্ধে একটি মহান আন্দোলন শুরু করার জন্য নির্বাচিত করেন। মুসা (আঃ)-এর কাছে আল্লাহ তাঁর অলৌকিক শক্তি প্রদান করেন, যার মাধ্যমে তিনি ফারাওকে চ্যালেঞ্জ করেন। মুসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর লাঠিকে সাপের রূপ দিতে সক্ষম হন এবং তাঁর হাতে আলো ফুটে ওঠে।

ফারাও এবং তাঁর মন্ত্রীরা মুসা (আঃ)-এর অলৌকিক শক্তি দেখতে পান, কিন্তু তারা তখনও মুসাকে চ্যালেঞ্জ করতে থাকে। ফারাও তাদের জাদুকরদের ডেকে আনে, কিন্তু মুসার অলৌকিক শক্তি তাদের পরাজিত করে। তবুও, ফারাও মুসার আহ্বান উপেক্ষা করে এবং অহংকারে তা অস্বীকার করে।

আল্লাহর বাণী শোনার দিন ( নবুয়তের প্রথম দিন):

মদইয়ান থেকে ফেরার পথে মুসা (আঃ) তুর পর্বতের কাছে আগুন দেখতে পান। আগুনের কাছে গেলে তিনি আল্লাহর কণ্ঠস্বর শুনতে পান: হে মূসা! আমি তোমার প্রভু। এই দিনই তিনি নবী হিসেবে মনোনীত হন।

জাদুকরের সাথে মোকাবেলা:

ফারাওয়ের হাজারো জাদুকরের সামনে মুসা (আঃ) লাঠি ছুঁড়ে মারেন, যা এক বিশাল সাপে রূপ নেয়। এই অলৌকিকতার পর জাদুকররাই ঈমান আনেন, যদিও ফারাও তাঁদের শাস্তি দেয়।

লাল সাগর বিভক্ত হওয়া:

ফারাও যখন তাঁর সৈন্যসহ ধাওয়া করে, তখন মুসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে লাঠি সাগরে মারেন। সাগর দুই ভাগ হয়ে যায় এবং বনি ইসরাঈল পার হয়ে যায়। পরে ফারাও ডুবে যায়।

বনি ইসরাইলকে মুক্তি দেওয়া:

ফারাও এবং তাঁর অনুসারীরা মুসা (আঃ)-এর আহ্বান গ্রহণ না করার পর, আল্লাহ তাআলা মুসা (আঃ)-কে বনি ইসরাঈলদের নিয়ে মিসর থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। মুসা (আঃ) বনি ইসরাঈলকে নিয়ে মিসরের সীমান্ত পার হয়ে যান। তবে ফারাও তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে তাঁদের ধাওয়া করতে থাকে। আল্লাহ মুসা (আঃ)-কে সমুদ্রে প্রবাহিত করে দেন, এবং সেখান থেকে তিনি নিরাপদে বের হয়ে আসেন। ফারাও এবং তার সেনাবাহিনী তলিয়ে যায়।

প্রমাণ, যা পৃথিবীজুড়ে প্রমাণ করে দেয় যে, যারা আল্লাহর পথে চলে, তাদের কোনো বাধা থাকতে পারে না।

তাওরাতের নাজিল:

মুসা (আঃ) পরে আল্লাহর কাছ থেকে তাওরাত (توراة) লাভ করেন, যা ইহুদিদের জন্য একটি নতুন বিধান হয়ে ওঠে। তাওরাত ছিল সামাজিক, ধর্মীয় এবং নৈতিক জীবনবিধি, যা মুসা (আঃ) বনি ইসরাঈলকে প্রদান করেন। তাওরাতের মাধ্যমে, ইহুদিদের মধ্যে ন্যায়, মানবিকতা এবং একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইসরাঈলদের শত্রুতা ও মুসার  শিক্ষা:

কিন্তু বনি ইসরাঈলদের মাঝে অনেকেই আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস দেখায়, বিশেষ করে সোনালী গরু পূজা করতে শুরু করে। মুসা (আঃ) তাদেরকে সতর্ক করেন, কিন্তু তারা তা অগ্রাহ্য করে। মুসা (আঃ) তাদের শিক্ষা দিতে থাকেন এবং বিভিন্ন অলৌকিক নিদর্শন দিয়ে তাদের কপটতা দূর করার চেষ্টা করেন।

বনি ইসরাইলকে নিয়ে গোপনে রাতযাত্রা:

আল্লাহর নির্দেশে মুসা (আঃ) এক রাতে তাঁর জাতিকে নিয়ে মিসর থেকে চলে যান। এটা ছিল জাতিকে মুক্তির পথে নিয়ে যাওয়ার শুরু।

মুসা আঃ এর মৃত্যু:


মুসা (আঃ)-এর নেতৃত্বে বনি ইসরাঈল দীর্ঘদিন পথ চলতে থাকে, কিন্তু মুসা (আঃ) যখন তাঁর জীবনের শেষ সময়ের দিকে চলে যান, তখন তিনি তুর পর্বতে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। তাঁর মৃত্যু ছিল এক মহান শোকের মুহূর্ত, কারণ তিনি ছিলেন বনি ইসরাঈলদের জন্য এক মহান নেতা।

উপসংহার:

মুসা (আঃ)-এর জীবনী, তাঁর সংগ্রাম এবং আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস বিশ্ববাসীকে শেখায় যে, সত্যের পথে চললে, ঈমানের প্রতি দৃঢ় আস্থা রাখলে, আল্লাহর সাহায্য একমাত্র রক্ষাকারী শক্তি। মুসা (আঃ)-এর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় মানবজাতির জন্য এক মহান শিক্ষা, যা বর্তমান প্রজন্মের জন্যও প্রাসঙ্গিক। আল্লাহর পথ অনুসরণ করতে হলে কখনোই আমাদের হৃদয়ে ভয় ও সংকোচ সৃষ্টি হতে পারে না, বরং আল্লাহর সাহায্য নিশ্চিত।

এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url