Funny stories for children: King Humbitumbi and the Lost Kingdom of Laughter
রাজা হম্বিতম্বি ও হারিয়ে যাওয়া হাসির রাজ্য
ধাপ ১: হাসির রাজ্যে অশান্তি
অনেক কাল আগে, সাত সাগর তেরো নদীর পারে ছিল এক অদ্ভুত রাজ্য—হাসিরাজ্য। এই রাজ্যের নাম শুনেই বোঝা যায়, এখানে সবাই হাসিখুশি, আনন্দে মেতে থাকে। এখানে কান্না নিষিদ্ধ। কেউ যদি হঠাৎ কেঁদে ফেলত, তবে রাজ্যের হাসি বাহিনী এসে তাকে জোর করে হাসাত! কেউ কেউ তো এত হাসতো যে নাকে দুধ পড়ে যেত।
এই রাজ্যের রাজা ছিলেন হম্বিতম্বি, যিনি শৈশব থেকেই এমন হো হো করে হাসতেন যে পাশের গ্রামে ভূমিকম্পের গুজব ছড়াত। তার মাথার টুপিতে ঘণ্টা লাগানো, আর গলায় সবসময় বাঁশি ঝুলত। একবার তার বাঁশির শব্দে গরু দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল! তবে সে ছিল ভীষণ প্রিয়। রাজা প্রতিদিন সকালে হেসে ওঠতেন, হাহা হাহা হো হো, আর সাথেই বাজাতেন ঢোল।
কিন্তু একদিন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল। রাজ্যের প্রাচীন হাসিমাপক যন্ত্র খিকখিকো-৩০০০ জানিয়ে দিল,
মহারাজ! রাজ্যে হঠাৎ করে হাসির হার ৩৩% কমে গেছে!
রাজা ঘাবড়ে গেলেন। প্রাসাদে জরুরি সভা ডাকা হলো। সভায় সবাই এতক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল—এমনকি রাজকীয় কৌতুকপাঠক লুচি মিঞাও কোনো জোক বলেনি। সবাই বলল,
মহারাজ, রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তে এক নতুন জাদুকর এসেছে, তার নাম মোরগালাল। সে মানুষের হাসি চুরি করছে!
রাজা রেগে উঠলেন, আমার রাজ্যে হাসি চুরি! এটা তো জাতীয় বিপর্যয়! তিনি সাথে সাথে ঘোষণা দিলেন—
আমি নিজে অভিযান চালাব। মোরগালালকে ধরে এনে রাজ্যে আবার হাহা হুরির বাতাস ফিরিয়ে আনবো!
ধাপ ২: হাহাহুরি বাহিনী গঠন
রাজা হম্বিতম্বি একেবারে রাজকীয় উৎসাহে হাহাহুরি বাহিনী গঠন করলেন। এই বাহিনীর প্রধান কাজ হলো—সব হাসি চোর ধরা, চিমটি কেটে হাসানো, আর কাউকে গম্ভীর দেখলে তার গায়ে চুলকোনো পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া।
বাহিনীতে ছিলেন বিভিন্ন চরিত্রের লোকঃ
১) গিলগিল ঘোষ – পেশায় চিমটি বিশেষজ্ঞ।
২) ঝাপটা মাস্টার – যার এক হাসি শুনে দুধ গরম হয়ে যায়।
৩) টুপটাপ বাচ্চু – যে হেঁটে হেঁটে হেঁচকি দিয়ে হাসায়!
৪) ফ্যাঁসা কাকু – যার চশমা কখনো চোখে থাকে না, সবসময় মাথায় গুঁজে পড়ে থাকে, আর কথা বললে চুল নড়ে।
এই বাহিনীর সাথে রাজা নিজেও রওনা দিলেন। তিনি
নিজের প্রিয় ঘোড়া হি-হি’তে চড়ে এগিয়ে চললেন। তার সঙ্গে ছিল হাসি ব্যাগ—যার ভিতরে ছিল একশো কৌতুক, বিশটা মজার মুখোশ, দশটা হাসির গান, আর একটা পুরনো ভাঙা আয়না—যেটাতে তাকালেই নিজের মুখ দেখে হেসে ফেলতে হয়।
পথে যেতে যেতে তারা দেখলেন, মানুষজনের মুখে হাসির বদলে ভাঁজ। এক মা বাচ্চাকে আদর করছেন না, বরং বলছেন, চুপ! বেশি হাসলে মোরগালাল আসবে! রাজা বুঝলেন, ভয় ঢুকে গেছে রাজ্যে।
তারা যখন চুপনগরী নামক গম্ভীর গ্রামে পৌঁছালেন, দেখলেন সবাই মুখ গম্ভীর করে হাঁটছে। রাজা নিজেই গেলেন এক বাবার কাছে জিজ্ঞেস করতে, হাসছেন না কেন?
লোকটা বলল, মোরগালাল রাতে এসে আমার হোয়াটসঅ্যাপের ইমোজি চুরি করে গেছে!রাজা হম্বিতম্বি এবার বুঝলেন, এ তো সত্যি ভয়ানক ব্যাপার। হাসি চুরি মানে শুধু মুখের ব্যাপার না, মানুষের মনটাও চুরি হয়ে যাচ্ছে।
ধাপ ৩: মোরগালালের মোকাবিলা
হাসিরাজ্যের গভীরে অবস্থিত এক পাহাড়ি গুহা, নাম ক্যাঁক্যাঁ গুহা। এখানেই থাকত জাদুকর মোরগালাল। সে একসময় হাসিরাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় জোকার ছিল। কিন্তু একদিন তার একটা জোক কেউ না হাসায় সে ভীষণ কষ্ট পায়। তার মন ভেঙে যায়, সে নিজের মাথার চুল কেটে ফেলায়, আর হাসির বদলে তৈরি করে গম্ভীর মন্ত্র।
এখন সে প্রতিরাতে মানুষের স্বপ্নে ঢুকে তাদের হাসির স্মৃতি চুরি করে নেয়। হাসিমাখা স্মৃতিগুলো সে একটা বালতিতে ভরে জমিয়ে রাখে, যাতে করে নিজের তৈরি ‘চুপের মূর্তি’ শক্তিশালী হয়।
হম্বিতম্বি সেই গুহায় প্রবেশ করলেন। সাথে ফ্যাঁসা কাকু তার টর্চ জ্বালাতে গিয়ে আবার চোখে চশমা পড়ে বসলেন! গুহার দেয়ালে লেখা ছিল, এখানে হাসি ঢোকা মানা। গম্ভীর হলে তবেই ভেতরে আসা যাবে!
রাজা চুপচাপ হলেন, গম্ভীর মুখ করে ঢুকলেন। কিন্তু ফ্যাঁসা কাকু হঠাৎ হাঁচি দিলেন—আর টুপ করে বালতি পড়ে গেল!
মোরগালাল চিৎকার করে বেরিয়ে এল, কে আমার হাসি চুরি করল?
রাজা বললেন, হাসি তো তুমি চুরি করেছ! আজ ফিরিয়ে দাও!
মোরগালাল বলল, তা হলে প্রমাণ করো—তুমি এখনো সত্যিকারের হাসতে পারো!
চ্যালেঞ্জ শুরু হলো—হাসির যুদ্ধ!
ধাপ ৪: হাসির যুদ্ধ ও জয়ের গান
মোরগালাল জাদু করে চারপাশে গম্ভীরতার মেঘ তৈরি করল। মানুষ, গাছপালা, এমনকি পাখিও কথা বলা বন্ধ করে দিল। রাজা হম্বিতম্বি তার ব্যাগ থেকে বের করলেন পুরনো ভাঙা আয়নাটা। গম্ভীরতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ দেখলেন। হঠাৎ এমন এক বিকৃত মুখভঙ্গি দেখলেন যে নিজেই হেসে উঠলেন।
তার সাথে ঝাপটা মাস্টার গান ধরলেন—
হাসো হাসো, না হলে পেট ঢাসো!
চিন্তা বাদ দাও, খিচুড়ি খাও!
মোরগালাল রেগে গিয়ে ঢিল ছুঁড়ল। কিন্তু সে বুঝতে পারল না, হাসি ছড়ানো এত সহজ নয়। মানুষের হাসি যদি একবার জেগে ওঠে, সেটা আর কেউ দমাতে পারে না।
রাজা তারপর গল্প বলতে লাগলেন মোরগালালকে, সেই দিনের গল্প যেদিন এক হাঁস প্যান্ট পরে স্কুলে গিয়েছিল! সবাই হো হো করে হেসে উঠল—even মোরগালালও ঠোঁট চেপে হাসি আটকাতে লাগল।
একসময়, গম্ভীরতার মেঘ ছিঁড়ে গেল, গুহার বালতিতে রাখা হাসির আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। মানুষের মুখে মুখে আবার হাসি ফিরল। মোরগালাল কান্নায় ভেঙে পড়ল,
আমি শুধু একটিবার চেয়েছিলাম কেউ আমার জোকসে হাসুক!
রাজা বললেন, তুমি আবার হাসিরাজ্যের জোকার হও। আমরা সবাই মিলে হাসি ভাগ করে নেব।
ধাপ ৫: হাসিরাজ্যের নতুন সকাল
মোরগালালকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। তাকে নতুন নাম দেওয়া হলো—জোকালাল। সে এখন আবার রাজপ্রাসাদের প্রধান কৌতুকপাঠক। প্রতিদিন রাজসভা বসে, সেখানে বাচ্চারা গল্প বলে, বৃদ্ধরা নাচে, আর সবাই মিলে হাসে।
রাজা হম্বিতম্বি আবার ঘোষণা দেন,
হাসি হলো আমাদের সোনার খনি। বেশি হাসলে রাজ্যে কর কম,
গম্ভীর হলে ঘাড়ে কচি গরুর পায়জামা!
চুপনগরী এখন হয়েছে খিকখিকপুর। সেখানে হাসির মেলা বসে প্রতি পূর্ণিমায়। মানুষজন বলে,
যে রাজ্যে হাসি নেই, সে রাজ্য নয়, সে কেবল ধোঁয়ায় ঢাকা দুঃখ!
এখন রাজা হম্বিতম্বি তার প্রিয় ঘোড়া ‘হি-হি’-তে চড়ে হাসির অভিযান করে বেড়ান। আর প্রতিটি গ্রামে গিয়ে বলেন—
তোমার আজ হাসি হয়েছে তো? না হলে দাঁড়াও, আমি পাজামা পড়ে দেখাই!
গল্পের শিক্ষণীয় দিক: রাজা হম্বিতম্বি ও হাহাহুরির অভিযান
গল্পটি মূলত আমাদের শেখায় যে হাসি শুধু একটি আবেগ নয়, এটি জীবনের এক শক্তিশালী উপাদান। রাজা হম্বিতম্বি এমন এক রাজ্যের প্রতীক, যেখানে মানুষ হাসতে জানে, খুশি থাকতে চায়, এবং সেই আনন্দকে অন্যদের সঙ্গেও ভাগ করে নেয়। কিন্তু যখন কেউ (যেমন—মোরগালাল) আঘাত পায় বা অবহেলিত হয়, তখন সে গম্ভীরতা ও বিষণ্নতার উৎস হতে পারে।
এই গল্পের মাধ্যমে বোঝা যায় যে মানুষের হাসি কেবল ঠোঁটে নয়, মনে থাকা জরুরি। কেউ যদি দুঃখ পায় বা হাসতে ভুলে যায়, তখন তাকে পাশে দাঁড়িয়ে বোঝানো প্রয়োজন, যেন সে আবার জীবনের আনন্দ খুঁজে পায়।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ক্ষমা ও পুনরুদ্ধার। মোরগালাল যখন ভুল করে হাসি চুরি করে, তখন রাজা তাকে শাস্তি না দিয়ে বুঝিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন। এটি আমাদের শেখায় যে দয়া, বোঝাপড়া এবং গ্রহণযোগ্যতা মানুষের মাঝে ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে পারে।
অবশেষে, গল্পটি সমাজে ইতিবাচক মনোভাব ছড়ানোর বার্তা দেয়। আমরা যদি একে অপরকে হাসাতে পারি, মজার মুহূর্ত ভাগ করে নিতে পারি, তবে আমাদের সমাজও হবে হাসিমাখা এক রাজ্য—যেখানে কেউ একা থাকবে না।