Literary Story: A Bond Like a Letter

A Bond Like a Letter   

Literary Story


পর্ব ১: পুরনো দিনের বন্ধন 

রাজীব আর আরিফ—দুজনের বন্ধুত্বটা যেন ছিল আকাশে লেখা। একই গ্রামের ছেলে, একই স্কুলে পড়ে, একই বেঞ্চে বসে। সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার পথে রাজীবের হাতে বই থাকলে আরিফের হাতে থাকত একটা টিফিনবক্স, যার অর্ধেক অংশ রাজীবের জন্য বরাদ্দ থাকত চিরকাল।

ছোটবেলার সেই নির্দোষ বন্ধুত্বটা সময়ের সাথে যেমন বড় হচ্ছিল, তেমনি তাদের স্বপ্নও বড় হচ্ছিল। রাজীব স্বপ্ন দেখত একদিন লেখক হবে, গল্প লিখবে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। আরিফ চাইত বড় ইঞ্জিনিয়ার হতে, তাদের গ্রামের রাস্তাগুলো যেন আর কাদায় ডুবে না থাকে।

তাদের বন্ধুত্বের আরেকটি বিশেষ দিক ছিল—‘চিঠি’

মোবাইলের যুগের আগে তারা ছোট ছোট কাগজে লিখে চিঠি বিনিময় করত। স্কুলের বেঞ্চের নিচে গুঁজে রাখা সেই চিঠিগুলোয় থাকত গল্প, মজা, রাগ, স্বপ্ন, আর গভীর একটা বন্ধনের ছোঁয়া।

একদিন স্কুলে বড় ঝড় হলো—রাজীবের বাবা মারা গেলেন হঠাৎ হৃদরোগে। রাজীবের পৃথিবী যেন মুহূর্তেই থেমে গেল। সেই সময় শুধু একজন পাশে ছিল—আরিফ। স্কুলের পরে প্রতিদিন সে রাজীবের বাড়িতে যেত, তাকে হাসাতে চেষ্টা করত। রাজীব বলেছিল একদিন,

তুই থাকলে মনে হয়, আমি একা না, আরিফ।

সময় বয়ে চলল, তারা কলেজে ভর্তি হলো—কিন্তু ভিন্ন শহরে। রাজীব ঢাকায়, আরিফ রাজশাহীতে। ফোনে মাঝে মাঝে কথা হতো, তবুও সেই পুরনো চিঠিগুলোর যুগ যেন হারিয়ে গেল। তবুও তাদের মন জানত—একজনের জায়গা অন্য কেউ নিতে পারবে না।

পর্ব ২: সময়ের দূরত্ব

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেই রাজীবের জীবনে এল নতুন এক অধ্যায়। সে সাহিত্যের ছাত্র, গল্প-উপন্যাস লিখে নাম করতে শুরু করল। পত্রিকায় তার লেখা ছাপা হতে লাগল, সবাই চিনল তাকে “তরুণ গল্পকার রাজীব নামে।

অন্যদিকে, আরিফ পড়াশোনায় ব্যস্ত থেকে গেল নিজের মতো। সে নিজের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছিল খুব অল্প বয়সেই, কারণ তার বাবার চাকরি হারানোর পর সংসারের ভার তার কাঁধেই এসে পড়ে।

দুজনের যোগাযোগ ধীরে ধীরে কমে এল। রাজীব নতুন বন্ধুদের মাঝে মিশে গেল, আরিফ ডুবে রইল সংসারের বাস্তবতায়।

একদিন রাজীবের ফোনে একটা অচেনা নম্বর থেকে কল এল ভাই, আমি আরিফের ভাই বলছি... আরিফ এখন হাসপাতালে। দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রাজীবের বুক কেঁপে উঠল। চোখের সামনে ভেসে উঠল শৈশবের সেই দিনগুলো, বেঞ্চের নিচে রাখা চিঠিগুলো, মাটির রাস্তা, হেসে কুটোপাটি খাওয়া দুপুরগুলো।

সে ছুটে গেল রাজশাহী। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা আরিফকে দেখে চোখ ভিজে গেল তার। আরিফের মুখে তখন অক্সিজেন মাস্ক, তবুও এক ঝলক হেসে বলল,

তুই আসবি জানতাম, রাজীব... বন্ধুত্ব কখনো শেষ হয় না।

সেই রাতে রাজীব আর ঘুমাতে পারেনি। হাসপাতালের করিডরে বসে নিজের খাতায় লিখতে লাগল শেষ চিঠি, একটা গল্প, যেখানে দুই বন্ধুর সম্পর্ক সময়কে হার মানায়।

(বিশ্বের বৃহত্তম স্থাপত্যশীল ১৫টি গির্জার নাম এবং সকল খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন)

পর্ব ৩: ‘শেষ চিঠি’র জন্ম 

কয়েকদিন পর আরিফ কিছুটা সুস্থ হলো, কিন্তু পায়ে আর আগের মতো হাঁটতে পারবে না—ডাক্তাররা বলল। রাজীবের মনটা ভেঙে গেল।সে বলল,

তুই দুশ্চিন্তা করিস না, আমি তো আছি। তোর বাড়িতে একটা লাইব্রেরি তৈরি করব। তুই বই পড়বি, মানুষ শেখাবি, গ্রামের ছেলেরা তোর কাছ থেকে আলোর দেখা পাবে।আরিফের চোখে পানি চলে এলো।

তুই এখন বড় লেখক, এত কিছু ভাবিস আমার জন্য?

রাজীব শুধু হাসল,

বন্ধুত্বে বড় ছোট বলে কিছু থাকে না, আরিফ। তুই আমার জীবনের গল্পের অমর চরিত্র।

 রাজীব শহরে ফিরে গিয়ে তার গল্প শেষ চিঠি প্রকাশ করল। গল্পটি ছাপা হওয়ার পর সাড়া পড়ে গেল পুরো সাহিত্যজগতে। মানুষ বলল, এই গল্পে এক বন্ধুত্বের অমর রূপ ফুটে উঠেছে।

কিন্তু রাজীব জানত গল্পটা শুধু গল্প না, এটা তার আরিফের জীবন্ত বন্ধন।

কিছুদিন পর সে আবার চিঠি লিখল, অনেক বছর পর—

প্রিয় আরিফ,
আমাদের গল্পটা এখন বই হয়ে গেছে। কিন্তু আমার কাছে এখনো তুই আছিস সেই মাটির রাস্তার মতো—অপরিবর্তিত, অটুট, অনন্ত।

চিঠিটা পাঠানোর পর এক সপ্তাহেই রাজীব খবর পেল—আরিফের হার্ট ফেল করেছে, আর সে আর বেঁচে নেই।

রাজীব চিঠিটা হাতে নিয়ে নিঃশব্দে বসে রইল। চোখের কোণে জল, ঠোঁটে ফিসফিস করে বলল,

তুই আমার গল্প হয়ে রইলি, আরিফ।

 

পর্ব ৪: বন্ধুত্বের উত্তরাধিকার 

বছর কয়েক কেটে গেল। রাজীব এখন বিখ্যাত লেখক, কিন্তু তার বইয়ের প্রতিটি উৎসর্গে একটা নাম লেখা থাকে আরিফ

একদিন রাজীব তাদের পুরনো গ্রামে ফিরে গেল। কাঁচা রাস্তা, স্কুলের পুরনো বেঞ্চ, আর নদীর ধারে বটগাছ—সবই আগের মতোই আছে। শুধু একটা মানুষ নেই।

সে গাছের নিচে বসে ছোট একটা পাথরের ফলকে লিখে রাখল—

খানেই জন্মেছিল শেষ চিঠির বন্ধুত্ব।

পাশে দাঁড়ানো কয়েকজন গ্রাম্য বালক এসে বলল,
আপনি কি রাজীব ভাই? আপনি নাকি আমাদের লাইব্রেরি বানিয়ে দিয়েছিলেন! রাজীব চমকে উঠল। জানল, আরিফের মৃত্যুর পর তার স্বপ্নের লাইব্রেরি এখনো টিকে আছে। গ্রামের ছেলেরা বই পড়ে, গল্প লেখে, কেউ কেউ তার লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের গল্প শুরু করেছে।

রাজীব চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকাল। মনে হলো, মেঘের ফাঁকে কোথাও থেকে কেউ যেন বলছে—

দেখ, আমাদের বন্ধুত্ব মরে নাই।

সেদিন রাজীব তার খাতায় নতুন গল্প লেখা শুরু করল—
বন্ধুত্ব কখনো শেষ হয় না।

পর্ব ৫: আরিফের ছায়া

শেষ চিঠির কালি শুকিয়ে গেছে অনেক আগেই, কিন্তু সেই চিঠির অনুভূতি আজও বেঁচে আছে এক গ্রামে, এক মানুষের হৃদয়ে, আর এক অমর সম্পর্কের ইতিহাসে।

বছর গড়িয়ে যায়, ঋতু বদলায়। রাজীবের জীবন এখন সাফল্যে ভরা — পুরস্কার, বইমেলা, টিভি সাক্ষাৎকার, সাহিত্য উৎসব। তবুও তার জীবনের গভীরে একটা নীরব শূন্যতা থেকে যায়।

প্রতিবার সে নতুন গল্প লিখতে বসলে মনে পড়ে সেই বেঞ্চের নিচে রাখা পুরনো কাগজের টুকরোগুলো। যেগুলোয় লেখা থাকত —

রাজীব, যদি তুই লেখক হোস, তোর গল্পে যেন আমি থাকি।

সেই কথাটা যেন ভবিষ্যদ্বাণী হয়ে গিয়েছিল। রাজীবের প্রতিটি গল্পে আরিফ কোনো না কোনোভাবে উপস্থিত থাকে — কখনও চরিত্র হয়ে, কখনও স্মৃতির গন্ধ হয়ে।

একদিন এক সাহিত্য অনুষ্ঠান শেষে রাজীবের কাছে এক তরুণ এসে দাঁড়াল।
স্যার, আমি সাকিব। আমি ‘আরিফ লাইব্রেরি’ থেকে পড়েছি। আমি এখন লেখক হতে চাই, আপনার মতো।

রাজীব অবাক হয়ে তাকাল ছেলেটার দিকে। কেমন যেন আরিফের মতো চোখ, হাসিটাও একদম মিলছে।

সে মৃদু হেসে বলল,

তুই জানিস, এই লাইব্রেরির নাম কেন আরিফ?

( হাজারো বাধা পেরিয়ে একটি মেয়ের সফলতা পাওয়ার গল্প জানতে এখানে ক্লিক করুন) 

সাকিব মাথা নাড়ল,

শুধু শুনেছি, কোনো এক মহান বন্ধুর নামে।

রাজীব চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ, তারপর নিজের ব্যাগ থেকে একটা পুরনো চিঠি বের করল—পাতার প্রান্ত ছেঁড়া, কালি ম্লান।

এই চিঠিটা ও লিখেছিল, হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়। আমি আজও খুলে পড়িনি।

সেই রাতে রাজীব একা বসে চিঠিটা খুলল। ভিতরে লেখা

রাজীব, আমি জানি সময় একদিন আমাদের দূরে নিয়ে যাবে। কিন্তু তোর লেখায় যদি আমি থেকে যাই, তবেই জানবি, বন্ধুত্ব মরেও বেঁচে থাকে।

রাজীবের চোখ ভিজে গেল। সে মনে মনে বলল,

তুই তো আছিসই, আরিফ… প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি গল্পে।

 পর্ব ৬: বন্ধুত্বের উত্তরাধিকার 

সময় অনেক কেটে গেছে। রাজীব এখন বৃদ্ধ, মাথায় পাক ধরেছে, তবুও প্রতিদিন সকালে কলম হাতে বসে লেখে। তার লেখার টেবিলের পাশে ছোট একটা ফ্রেমে আছে দুই ছেলের ছবি—একজন রাজীব, অন্যজন আরিফ।

একদিন গ্রামের স্কুল থেকে আমন্ত্রণ এল শেষ চিঠির বন্ধুত্ব নিয়ে বিশেষ আলোচনায় রাজীবকে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাকা হলো।

রাজীব গ্রামে ফিরল বহু বছর পর। গ্রামের শিশুরা তাকে ঘিরে ধরল, তাদের চোখে অদ্ভুত কৌতূহল। রাজীব গাছতলায় দাঁড়িয়ে বলল,

এই গাছটার নিচেই আমার প্রথম গল্প জন্মেছিল, এই গাছটাই আমার বন্ধুত্বের সাক্ষী।

 তার কথা শেষ হতে না হতেই এক ছোট্ট মেয়ে এগিয়ে এল হাতে ফুল নিয়ে।

চাচা, আমি আরিফ কাকার মেয়ের মেয়ে। মা বলত, আপনি নাকি তার বাবার প্রাণের বন্ধু।

রাজীব কিছু বলতে পারল না, চোখের পানি গাল বেয়ে নেমে এলো।
সে মেয়েটির মাথায় হাত রেখে বলল,

তোমার দাদার হাসি এখনো আমি শুনতে পাই।

সেই দিন স্কুলের ছেলেমেয়েরা রাজীবকে ঘিরে বসে গল্প শুনল কীভাবে বন্ধুত্ব বই হয়ে ওঠে, কেমন করে এক সম্পর্ক সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে যায়।

শেষে রাজীব বলল,

বন্ধুত্ব মানে শুধু হাসি নয়, বন্ধুত্ব মানে দায়িত্ব, স্মৃতি, আর হৃদয়ের গভীরে একটা নাম, যা কখনো মুছে যায় না।

 সন্ধ্যার পর রাজীব গাছের নিচে গিয়ে আবার একটা চিঠি লিখল

আরিফ, আজ তোর নাতনির চোখে তোর হাসি দেখলাম। বুঝলাম, বন্ধুত্ব মরে না—ওটা শুধু রূপ পাল্টায়, প্রজন্ম বদলালেও ভালোবাসা টিকে থাকে।

চিঠিটা সে বটগাছের গোড়ায় রেখে বলল,

যেখানে আমাদের প্রথম চিঠি গুঁজে রাখতাম, আজ সেখানে শেষ চিঠিটা রাখলাম।

আকাশে তখন পূর্ণ চাঁদ উঠেছে। রাজীব ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরল, মনে হলো বাতাসে কেউ যেন ফিসফিস করে বলছে,

ধন্যবাদ রাজীব, তুই আমার বন্ধুত্বটাকে অমর করে দিয়েছিস।

 উপসংহার 

শেষ চিঠির বন্ধুত্ব কোনো কল্পকাহিনি নয়, এটা প্রতিটি মানুষের জীবনের বাস্তব অনুভূতি।
বন্ধু মানে শুধু কথা বলা না, বন্ধুত্ব মানে হৃদয়ের এমন এক বন্ধন যা সময়, দূরত্ব, কিংবা মৃত্যু দিয়েও শেষ হয় না।

রাজীব আর আরিফের গল্পটা শুধু দুজন মানুষের কাহিনি নয়—এটা আমাদের সবার ভেতরের সেই বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা, যাকে আমরা হয়তো হারিয়ে ফেলেছি, তবুও ভুলিনি কখনো।

একসময় রাজীবের মৃত্যুর পর তার খাতায় শেষ লেখা হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল একটা লাইন

আমার শেষ গল্পটা শুরু হবে, যেখানে বন্ধুত্বের শেষ নেই।

 এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
whatsapp" viewbox="0 0 512 512" stroke="none" fill="currentColor">