সিংহ ও বাঘের লড়াই রূপকথার গল্প: জঙ্গলের রাজত্বের জন্য!

 সিংহ এবং বাঘের লড়াই জঙ্গলের রাজত্বের জন্য

রূপকথার গল্প লিখিত


এক দেশে ছিল এক বিশাল অরণ্য, যেখানে বাস করত একটি বাঘ ও একটি সিংহ। বাঘ ছিল দ্রুতগামী এবং শিকার ধরার দক্ষতায় অনন্য। সিংহ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সাহসী। তবে দুজনের মধ্যে একটি গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল—কে আসল জঙ্গলের রাজা? বাঘ মনে করত, তার শিকারের নৈপুণ্যের কারণে সে জঙ্গলের রাজা হওয়ার যোগ্য। আর সিংহ মনে করত, তার সাহস এবং ক্ষমতার কারণে তারই এ সিংহাসন প্রাপ্য।

একদিন, জঙ্গলে একটি মারাত্মক খরা দেখা দেয়। নদীর জল শুকিয়ে যেতে শুরু করে, গাছের পাতা ঝরতে থাকে, আর প্রাণীদের খাদ্য-সংকট দেখা দেয়। জঙ্গলের অন্যান্য পশুরা চিন্তায় পড়ে গেল। এই দুর্যোগে তাদের বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য প্রয়োজন। সবাই একত্রে সিদ্ধান্ত নেয়, বাঘ এবং সিংহের সাহায্য চাওয়া হবে। তারা নিজেদের মধ্যে বিবাদ বন্ধ করে জঙ্গলের প্রাণীদের সাহায্য করুক।

জঙ্গলের বয়স্ক হাতি সব প্রাণীদের প্রতিনিধি হিসেবে বাঘ ও সিংহের কাছে গিয়ে তাদের কথাবার্তা শোনায়। হাতি বলল, তোমাদের মধ্যে যে আসল রাজা, সে-ই আজ প্রমাণ করবে তার শক্তি, তবে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে নয়, বরং সবাইকে রক্ষা করে।

বাঘ এবং সিংহ এ কথায় রাজি হয়। তারা নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে সবাইকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে তাদের মধ্যে একটি শর্ত ছিল—যে সবচেয়ে বেশি উপকার করবে, সেই হবে আসল রাজা।

প্রথমেই, বাঘ তার দ্রুতগতি কাজে লাগিয়ে জঙ্গলের আশপাশ থেকে খাবার সংগ্রহ করতে শুরু করল। সে অনেক দূরের গ্রামগুলো থেকে শিকার ধরল এবং তা জঙ্গলের প্রাণীদের মধ্যে বিতরণ করল। সবাই তার কাজ দেখে মুগ্ধ হল। বাঘকে সবাই সাধুবাদ জানাল।

অন্যদিকে, সিংহ একদিন নদীর পাড়ে বসে চিন্তা করছিল, কিভাবে সবাইকে আরও ভালোভাবে সাহায্য করা যায়। সে হঠাৎ বুঝতে পারল যে জঙ্গলের আসল সমস্যা ছিল খাবারের অভাব নয়, পানির সংকট। নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে জঙ্গল শুষ্ক হয়ে উঠেছে এবং খাদ্যও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সিংহ চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিল, নদীতে একটি নতুন খাল তৈরি করে জলের প্রবাহ পুনরুদ্ধার করতে হবে।

সিংহ তার বিশাল শক্তি কাজে লাগিয়ে দিনরাত খাল কাটতে শুরু করল। সে একা একাই মাটি খুঁড়তে থাকে, আর খালের মধ্যে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করে। কয়েকদিনের মধ্যে নদীর জল আবার খালে এসে পড়ল, এবং জঙ্গলের আশপাশ সবুজ হতে শুরু করল। প্রাণীরা পানির নতুন উৎস পেয়ে খুশি হল, তাদের খাদ্য সমস্যা ধীরে ধীরে মিটতে লাগল। সিংহের প্রচেষ্টা দেখে সবাই তাকে ধন্যবাদ জানাল।

কয়েকদিন পর, জঙ্গলের সকল প্রাণী আবার বাঘ এবং সিংহের সামনে হাজির হল। তারা তাদের মধ্যে বিচার করার জন্য প্রস্তুত ছিল। বাঘ জানাল, সে বহু কষ্ট করে খাবার সংগ্রহ করেছে এবং অনেক প্রাণীর ক্ষুধা মিটিয়েছে। সিংহ জানাল, সে জঙ্গলের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য খাল তৈরি করেছে, যা শুধুমাত্র এসময়ের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও সাহায্য করবে।

হাতি তখন বলল, দুজনই মহান, দুজনই নিজেদের উপায়ে সাহায্য করেছে। তবে যেহেতু আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান চাই, তাই সিংহই হবে জঙ্গলের আসল রাজা। সে জঙ্গলের জন্য যে কাজ করেছে, তা দীর্ঘকাল ধরে উপকারে আসবে।

বাঘও হাতির সিদ্ধান্ত মেনে নিল। সে বুঝতে পারল, শুধুমাত্র নিজের দক্ষতা দেখানোই রাজা হওয়ার যোগ্যতা নয়, বরং সবাইকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান বের করাই আসল কাজ। সে সিংহের সামনে মাথা নত করে বলল, তুমি সত্যিই রাজা হওয়ার যোগ্য, কারণ তুমি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করেছ।

সিংহ বলল, তুমি যদি আমার পাশে থাকো, তাহলে আমরা একসাথে জঙ্গলকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারব।

এরপর থেকে, সিংহ এবং বাঘ একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করল। জঙ্গল আবার সবুজ হয়ে উঠল, আর সকল প্রাণী সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। সিংহ আর বাঘের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে জন্ম নিল বন্ধুত্ব, এবং তাদের নেতৃত্বে জঙ্গল পরিণত হল এক সুখী, সমৃদ্ধ জায়গায়।


এইভাবেই বাঘ এবং সিংহ তাদের রোলাই বন্ধ করে বন্ধুত্ব এবং ঐক্যের মধ্যে জঙ্গলের সঠিক নেতা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করল।

এরকম বিষয়ে আরো জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে বিশ্বের জানা অজানা তথ্য বা বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কারের ইতিহাস, রূপকথার মজাদার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি, বিশ্ব বিখ্যাত মনীষীদের জীবন কাহিনী, শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ টিপস ,ইসলামিক হাদিস এবং ইসলামের খুঁটিনাটি বিষয়, সাফল্য নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক গল্প বা স্ট্যাটাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক https://www.mahadistoryworld.com/


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url