কলম আবিষ্কারের প্রাচীন এবং আধুনিক ইতিহাস!

 কলম আবিষ্কারের ইতিহাস: 

Ancient Writing Instruments



কলম মানুষের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। লেখার আদিম মাধ্যমগুলো থেকে শুরু করে আধুনিক কলমের উদ্ভব পর্যন্ত এই যাত্রা ছিল দীর্ঘ। যদিও আমাদের কাছে আজকের কলম অত্যন্ত সাধারণ একটি উপকরণ হিসেবে দেখা যায়, এর পিছনে রয়েছে হাজার হাজার বছরের বিবর্তন এবং নানা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন।

আদিম লেখার মাধ্যম

মানুষ যখন প্রথমবারের মতো নিজের চিন্তা ও তথ্য লিখে রাখতে শুরু করে, তখন মূলত প্রাকৃতিক উপকরণের সাহায্যে লিখতেন। প্রাচীনকালে মানুষ পাথর, কাঠ, মাটি, এবং চামড়ার ওপর লিখত। প্রাচীন মিশরীয়রা ৩,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্যাপিরাস উদ্ভাবন করেন, যা ছিল একটি বিশেষ প্রকারের কাগজ। প্যাপিরাসের ওপর লেখা হতো মূলত কলমের প্রাচীনতম সংস্করণ দ্বারা, যাকে আমরা আধুনিক কালে স্টাইলাস বলি। স্টাইলাস ছিল একটি পাথরের দণ্ড, যা দিয়ে নরম মাটিতে বা কাগজে লেখা হতো। স্টাইলাস দিয়ে লেখার পর তা শুকিয়ে যেত এবং স্থায়ী হয়ে যেত।

ঈক্ষুদণ্ড ও পালক কলমের উদ্ভব

প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় ঈক্ষুদণ্ড (reed pen) ব্যবহার করা হতো। এটি ছিল বাঁশ বা অন্যান্য নরম কাঠ দিয়ে তৈরি একধরনের দণ্ড, যার মাথায় কাটা হতো একটি সূক্ষ্ম ফাঁক, যেখানে কালির সংস্পর্শ থাকত। পরে এই কালি কাগজে লাগিয়ে লেখা হতো। এই পদ্ধতিটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, বিশেষ করে লেখার গতিশীলতার ক্ষেত্রে।

প্রাচীন মিশরীয়দের পরে মধ্যযুগে পালক কলমের (quill pen) উদ্ভব হয়। এটি মূলত পাখির পালক দিয়ে তৈরি করা হতো, যা কলমের বিবর্তনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাখির পালকের ফাঁকা অংশে কালি সংরক্ষণ করা হতো, এবং এই কালি ধীরে ধীরে ফোঁটা আকারে কাগজে এসে পড়ত। পালক কলম ব্যবহারের একটি সুবিধা ছিল এর মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে লেখা সম্ভব হওয়া। এটি বিশেষভাবে ইউরোপীয় রেনেসাঁ যুগে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং দার্শনিক, লেখক এবং শিল্পীরা এর মাধ্যমে তাদের চিন্তা লিখে রাখতেন।

ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কার

কলমের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ফাউন্টেন পেনের (fountain pen) আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ১৭ শতকের প্রথম দিকে ফাউন্টেন পেনের ধারণা উদ্ভাবিত হয়। এই কলমের মধ্যে নিজস্ব একটি কালি সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল, ফলে আলাদাভাবে কালি ব্যবহারের প্রয়োজন কমে যায়। প্রথম দিকে ফাউন্টেন পেনের কালি ব্যবস্থাপনা বেশ জটিল ছিল, কারণ কালি প্রায়ই লিক করত, যা লেখার অভিজ্ঞতা দুর্বিষহ করে তুলত। তবে ধীরে ধীরে এই প্রযুক্তি উন্নত হয় এবং ১৯ শতকের মধ্যভাগে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফাউন্টেন পেনের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে লেখা সহজ হয় এবং লেখার গতি বৃদ্ধি পায়।

বল পয়েন্ট পেনের আবিষ্কার

ফাউন্টেন পেনের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে বল পয়েন্ট পেনের (ballpoint pen) আবিষ্কার ঘটে। ১৯৩৮ সালে হাঙ্গেরীয় সাংবাদিক লাসলো বিরো এই কলমটি উদ্ভাবন করেন। ফাউন্টেন পেনের তুলনায় বল পয়েন্ট পেনের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল এর মসৃণ এবং দ্রুত লেখা। বল

পয়েন্ট পেনের নীচের অংশে একটি ছোট বল থাকে, যা কাগজের সঙ্গে স্পর্শে এসে কালি ছাড়ে। এটি খুবই কার্যকর ছিল এবং দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। বল পয়েন্ট পেনের মাধ্যমে সহজেই দীর্ঘ সময় ধরে লেখা সম্ভব, এবং এটি পোর্টেবল হওয়ায় ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই সুবিধাজনক হয়ে ওঠে।

জেল পেনের উদ্ভাবন

বল পয়েন্ট পেনের পর কলম প্রযুক্তিতে আরেকটি বড় উদ্ভাবন ছিল জেল পেনের (gel pen) আবিষ্কার। ১৯৮০-এর দশকে এই কলমটি প্রথম বাজারে আসে। জেল পেনের কালি ফাউন্টেন পেন বা বল পয়েন্ট পেনের চেয়ে ঘন এবং মসৃণ হয়। এর ফলে লেখা আরও সহজ এবং দ্রুত হয়। এ ছাড়াও, জেল পেনের কালি নানা রঙে পাওয়া যায়, যা একে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে পেশাদাররা জেল পেন ব্যবহার করে থাকেন।

আধুনিক কলম ও ডিজিটাল যুগ

বর্তমানে আমরা যা কলম ব্যবহার করি, তা অনেকটাই পূর্বের উদ্ভাবনগুলোর মিশ্রণ। বল পয়েন্ট, জেল পেন এবং ফাউন্টেন পেনের মতো নানা ধরনের কলম পাওয়া যায় বাজারে। তবে আধুনিক যুগে কলমের ব্যবহার অনেকটাই কমে আসছে, কারণ প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে অনেকেই ডিজিটাল মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন লেখার জন্য। কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের কলম (stylus) ব্যবহারে এখন মানুষ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি করছেন।

তবে, ডিজিটাল যুগেও কলমের গুরুত্ব কমে যায়নি। বিশেষ করে সৃজনশীল লেখালেখি, শিল্পকর্ম এবং ব্যক্তিগত ডায়েরি লেখার ক্ষেত্রে কলমের ব্যবহার আজও বহুল প্রচলিত। পাশাপাশি, অনেকেই হাতের লেখা শৈলীকে একটি শিল্পমাধ্যম হিসেবে দেখে থাকেন, যা কলমের গুরুত্বকে এখনও সমুন্নত রাখে।

উপসংহার

কলমের আবিষ্কার এবং এর বিবর্তন মানব সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বিভিন্ন যুগে নানা ধরনের কলমের উদ্ভাবন মানুষের জ্ঞান এবং চিন্তা ধারাকে সংরক্ষণ এবং প্রচারের একটি প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। আজকের আধুনিক যুগে কলমের ব্যবহার হয়তো কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, তবে এর গুরুত্ব কখনোই ম্লান হয়নি। কলম কেবল একটি লেখার উপকরণ নয়, এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা, জ্ঞান এবং সৃষ্টিশীলতার একটি প্রতীক।

এরকম বিষয়ে আরো জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে বিশ্বের জানা অজানা তথ্য বা বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কারের ইতিহাস, রূপকথার মজাদার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি, বিশ্ব বিখ্যাত মনীষীদের জীবন কাহিনী, শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ টিপস ,ইসলামিক হাদিস এবং ইসলামের খুঁটিনাটি বিষয়, সাফল্য নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক গল্প বা স্ট্যাটাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক https://www.mahadistoryworld.com/

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url