মজার কার্টুন গল্প: টুনটুনির বুদ্ধি ও রাজার শিক্ষা
টুনটুনির বুদ্ধি ও রাজার শিক্ষা
*ভূমিকা
এক ছিল টুনটুনি পাখি, ছোট্ট, ছটফটে আর বুদ্ধিমান। অন্যদিকে এক রাজা, রাজ্যের রাজা হলেও বেশ অহংকারী ও স্বার্থপর। সে ভাবত, জগতের সব কিছুই তার আদেশে চলে এবং সে যা চাইবে তা-ই পাবে। এই গল্পটি ছোটদের জন্য হলেও এর শিক্ষণীয় দিক বড়দের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এবার আমরা জানব কিভাবে একটি ক্ষুদ্র পাখি এক অহংকারী রাজার জেদ ভেঙে দিয়ে তাকে একটি মহান শিক্ষা দিলো।
*রাজার খাবারের শখ
রাজা অত্যন্ত ভোজনরসিক ছিল। রাজপ্রাসাদে প্রতিদিন নতুন নতুন রান্না হতো, তবে রাজার মন তাতেও ভরত না। একদিন এক ভৃত্য এসে বলল, মহারাজ, জঙ্গলের মধ্যে একটি টুনটুনি পাখি আছে, তার মাংস নাকি ভীষণ সুস্বাদু। রাজা হঠাৎ উৎসাহিত হয়ে উঠলেন। ওহ! তাহলে আর দেরি কেন? ধরে আনো সেই পাখিকে। আজ রাতের খাবারে আমি টুনটুনি খেতে চাই!
*টুনটুনির বন্দিত্ব
রাজ্যের সৈন্যরা জঙ্গলে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করল। অবশেষে একটি গাছে বসে গান গাইছিল টুনটুনি। গান শুনেই সৈন্যরা তাকে দেখতে পেল। তারা জাল ছুঁড়ে দিল এবং মুহূর্তের মধ্যেই টুনটুনিকে ধরে ফেলল। তাকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হলো। রাজা খুশি হয়ে বললেন, আজ আমার খাবারে নতুন স্বাদ আসবে।
*টুনটুনির বুদ্ধি
টুনটুনি বুঝতে পারল, তার জীবন সংকটে। কিন্তু সে ভীত হয়নি। তার ছোট্ট মাথায় এক বুদ্ধি খেলে গেল। সে রাজার সামনে গেয়ে উঠল,
আমি ছোট্ট পাখি,
মনের বড় সাহসী।
যদি আমাকে ছেড়ে দাও,
দেব গান উপহার নিঃসীম ভালোবাসায়।
রাজা বললেন, তুমি গান গাও? তাহলে শোনাও একবার। যদি ভালো লাগে তবে ভাবব মুক্তি দেব কি না।
টুনটুনি তার মিষ্টি কণ্ঠে গান গাইতে শুরু করল। সে গাইছিল পাহাড়ের গল্প, বনের রূপ, নদীর কলকল শব্দ, আকাশের রঙ। রাজা বিমোহিত হয়ে গেল। কখনো সে চোখ বন্ধ করে শুনছিল, কখনো মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল টুনটুনির দিকে।
গান শেষ হলে রাজা বলল, তোমার গলা সত্যিই অপূর্ব। কিন্তু তাতে কি তোমার প্রাণ রক্ষা হবে? আমি তো তোমায় খেতে চাই।
টুনটুনি মুচকি হেসে বলল, মহারাজ, আমাকে খেয়ে আপনি একবার খুশি হবেন, কিন্তু আমাকে রেখে দিলে আমি প্রতিদিন আপনাকে গান শোনাব। এতে আপনার মন ভালো থাকবে, হৃদয় হবে কোমল।
*রাজার দ্বিধা ও সিদ্ধান্ত
রাজা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তিনি চিন্তা করলেন—প্রাণীজগতে সবাই তাকে ভয় পায়, কেউ কখনো ভালোবেসে কথা বলে না। এই ছোট্ট পাখিটি বিনয়ের সঙ্গে কথা বলছে, তাকে আনন্দ দিচ্ছে। এক সময় তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, ঠিক আছে, আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম। তবে কথা দাও, প্রতিদিন আমার কাছে এসে গান গাবে।
টুনটুনি বলল, আমি কথা দিচ্ছি, মহারাজ।
*টুনটুনির মুক্তি
রাজা নিজ হাতে খাঁচা খুলে দিলেন। টুনটুনি উড়ে গেল মুক্ত আকাশে। সে আর ফিরে এলো না। রাজা অপেক্ষা করলেন দিন, দুই দিন, তিন দিন। কিন্তু টুনটুনি আর এল না।
প্রথমে রাগে গর্জে উঠলেন রাজা। কিন্তু পরে বুঝলেন, সে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছেন। জীবনে কখনো অহংকার করা উচিত নয়। ভালোবাসা ও সম্মান দিয়ে সম্পর্ক তৈরি করতে হয়, ভয় দেখিয়ে নয়।
*শিক্ষণীয় দিক
১. অহংকার পতনের মূল: রাজা তার অহংকারের জন্য পাখির গান চিরতরে হারাল।
২. বুদ্ধি সব সময় শক্তিকে হারাতে পারে: টুনটুনি তার বুদ্ধি দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে নিলো।
৩. মুক্তির মূল্য: স্বাধীনতা সবার প্রাপ্য এবং কেউই জোর করে কারো ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না।
৪. মানবিকতা: রাজা শেষ পর্যন্ত নিজের ভিতরের কোমলতা আবিষ্কার করলেন।
*উপসংহার
এই গল্পটি শুধু একটি পাখি ও একজন রাজার গল্প নয়। এটি একটি বার্তা—ছোট হলেও বুদ্ধিমান হলে এবং সাহস থাকলে যেকোনো প্রতিকূলতা জয় করা যায়। আর যারা ক্ষমতায় থেকেও বিনয় ভুলে যায়, তারা একদিন অবশ্যই শিখে নেয় জীবনের আসল শিক্ষা। টুনটুনির গান সেই শিক্ষা দেওয়ার এক উপায় ছিল মাত্র।
এই গল্পটি ছোটদের কল্পনা জগতে আনন্দ এনে দেয়, আবার নৈতিক শিক্ষাও দেয়। আপনি চাইলে এর কার্টুন ভিডিও বা বইয়ের রূপান্তরও তৈরি করে দিতে পারি!
تعليقات
إرسال تعليق