রূপকথার গল্প: রুপার কান্না আর একটি জাদুকরি ইচ্ছা

 এক ছিলো ছোট্ট একটি মেয়ে, নাম তার রুপা। সে থাকতো ছোট্ট একটি গ্রামের ধারে, যেখানে চারপাশে সবুজ ফসলের মাঠ আর বিশাল আকাশের নিচে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়া যেতো। তার জীবনে আনন্দ ছিল খুব সামান্য, তবুও মিষ্টি হাসি মুখে সবার মন জয় করত। রুপার বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক, যার কাজ ছিলো ফসল ফলানো। মায়ের ছিল একটি ছোট খামার, যেখানে দু’টি গরু আর কয়েকটি মুরগি ছিলো। এই ছোট্ট সংসারেই রুপার শৈশব কেটেছে।

তবে, রুপার মনে সবসময় একটি শূন্যতা ছিল। তার বাবা-মা তাকে খুব ভালোবাসতো, কিন্তু তারা খুবই ব্যস্ত থাকতো নিজেদের কাজ নিয়ে। গ্রামের অন্যান্য ছেলেমেয়েরা রুপার সাথে খেলতে চাইত না, কারণ তাদের সবার অনেক সম্পদ ছিল আর রুপা ছিল খুবই সাধারণ। ফলে, রুপার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল গ্রামের ধারে থাকা একটি পুরোনো বটগাছ। সেই গাছের নিচে বসে রুপা গল্প শুনতো বাতাসের শব্দ থেকে আর মনে মনে কল্পনা করতো নানা ধরনের রূপকথার চরিত্র।

একদিন, বটগাছের নিচে বসে থাকার সময় রুপা হঠাৎ দেখতে পেলো অদ্ভুত একটি জিনিস—গাছের গোড়ায় একটি ছোট্ট রুপালি বাক্স। কৌতূহলবশত, রুপা বাক্সটি খুলে দেখলো তার ভেতরে একটি ছোট্ট সোনার রঙের চাবি আর একটি ছোট কাগজ। কাগজটিতে লেখা ছিলো, এই চাবি তোমার কান্নাকে রূপকথায় রূপান্তর করবে, কিন্তু সাবধান! একটি মাত্র ইচ্ছা পূরণ হবে।

রুপা বাক্সটি হাতে নিয়ে ভাবলো, আমি তো কিছুই চাই না, আমার কাছে তো সবকিছুই আছে। কিন্তু ঠিক তখনই, তার মনের গভীরে একটি লুকানো ব্যথা ফুঁসে উঠলো। সে আসলে বন্ধু চেয়েছিল, এমন একজন বন্ধু যে তাকে বুঝবে, যার কাছে সে তার সব কথা বলতে পারবে। সেই মুহূর্তে, রুপা সেই চাবিটিকে মুঠোয় ধরে শক্ত করে ধরে ইচ্ছা করলো, আমার একজন সত্যিকারের বন্ধু হোক।

তারপর হঠাৎ করেই, আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল, বাতাসে বয়ে গেল এক গভীর সুর। রুপা অবাক হয়ে চারপাশ দেখলো, কিন্তু কিছুই ঘটলো না। দুঃখিত মনে সে বাড়ি ফিরে এলো, মনে মনে ভাবলো যে চাবির কোনো যাদু নেই। তবে তার মন ভারী হতে লাগলো, যেন সে ভুল কিছু করেছে।

রাতের বেলা, যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিল, তখন রুপার ঘরের জানালা খোলা ছিল। হঠাৎ এক হালকা বাতাসের সঙ্গে একটা মৃদু আওয়াজ আসলো। রুপা ঘুম ভেঙে জানালার দিকে তাকাতেই দেখলো এক ছোট্ট রুপালি পাখি, যার ডানাগুলো ছিল সোনালী আলোয় ঝলমল করা। পাখিটি ধীরে ধীরে তার বিছানার পাশে বসে বললো, আমি তোমার ইচ্ছার বন্ধু।

রুপা প্রথমে অবাক হলো, তারপর একটু একটু করে বুঝলো, এই পাখিটাই তার সেই বন্ধু যাকে সে চেয়েছিল। পাখিটি কথা বলতে পারে, তার সব দুঃখের কথা শোনে এবং সান্ত্বনা দেয়। দিন কাটতে লাগলো, আর রুপা তার নতুন বন্ধুর সাথে প্রচুর সময় কাটাতে লাগলো। তবে একদিন, পাখিটি আস্তে আস্তে বললো, রুপা, তুমি জানো কি, আমার সময় ফুরিয়ে আসছে?

রুপা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেন? তুমি তো আমার ইচ্ছার বন্ধু, তোমাকে তো চিরকাল আমার সাথে থাকার কথা!

পাখিটি বিষণ্ণ স্বরে বললো, তুমি আমাকে যাদু দিয়ে তৈরি করেছ, কিন্তু যাদু চিরস্থায়ী নয়। আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে এসেছি, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বিদায় নিতে হবে।

এই কথা শুনে রুপার চোখে পানি চলে এলো। এতদিন পর সে একজন সত্যিকারের বন্ধু পেয়েছিল, কিন্তু তাকেও হারাতে হবে! পাখিটি রুপার কান্না দেখে বললো, কান্না করো না, রুপা। আমি থাকবো তোমার স্মৃতিতে, তোমার হৃদয়ে। প্রকৃত বন্ধুত্ব কখনও ফুরিয়ে যায় না।

রুপা বুঝতে পারলো, বন্ধু শুধু একজন জীবিত সত্তা নয়, বন্ধু হতে পারে সেই যা আমাদের মনকে শান্তি দেয়, আমাদের কষ্টে সান্ত্বনা দেয়। পাখিটি তার ডানাগুলো একবার ঝাপটিয়ে আকাশের দিকে উড়ে গেলো, আর রুপা জানলো, সে একাই নয়। পাখির স্মৃতি তার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।


রুপার জীবনে তখন থেকে আর কোনো একাকিত্ব ছিলো না। সে শিখেছিল যে, প্রকৃত বন্ধুত্ব কোনো চাবি বা যাদুতে আসে না, বরং তা হৃদয়ের গভীর অনুভূতির সঙ্গে আসে। বটগাছের ছায়ায় বসে রুপা এখনও তার সেই বন্ধুর কথা মনে করে, আর মনে মনে হাসে।

এরকম বিষয়ে আরো জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন। এই ওয়েবসাইটের উপরে দেখবেন থ্রি ডট মেনুতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন যেমন : মজাদার রূপকথার গল্প, সাফল্যের জন্য উক্তি, বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী, হেলথ টিপস, বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে মুসলিম ছেলেদের আরবি নাম, ইসলামে খুঁটিনাটি বিষয় ইত্যাদি। ওয়েবসাইটের লিংক https://www.mahadistoryworld.com/

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
="0 0 384 512" stroke="none" fill="currentColor"> " viewbox="0 0 320 512" stroke="none" fill="currentColor">